এপ্রিল ২৬, ২০২৫

শনিবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

চান্দিনার বিভিন্ন রাস্তার পাশে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ভাঁট ফুল

Rising Cumilla - Clerodendrum infortunatum
ছবি: প্রতিনিধি

রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে গেলে একটি বুনোফুল দেখা যায় রাস্তায় অযত্ন অবহেলায় বেড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ফুলটি দেখা যায় শীতের শেষ বসন্ত ঋতুর শুরুতে এ ফুল রাস্তার আশেপাশে বিভিন্ন ঝোপ জঙ্গলে ফুটে ওঠে। পথিকের দৃষ্টি এড়ানো সম্ভব নয় বলেই অপলক দৃষ্টিতে এ ফুলটির দিকে চেয়ে থাকার মধ্যে এক ভীষণ রকমের আনন্দ কাজ করে। নিজেকে তখন প্রেমিক বা কবি ভাবার আনন্দে অনেকটা আবেগ নিয়েই ফুলটি ছিঁড়ে নিয়ে যান অনেকে।

বলছিলাম কুমিল্লার চান্দিনা বিভিন্ন এলাকার পথে-প্রান্তরে শ্বেত-শুভ্রতায় ছড়ানো ভাঁট ফুলের কথা।

অঞ্চল বিশেষে নামের ভিন্নতা থাকলেও এ উপজেলায় ভাঁট গাছ বা ভাট ফুল আবার অনেকে ভেটবেগুরা গাছ বা ভেটবেগুরার ফুল নামে পরিচিত।

এটি গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত একটি বুনো ফুল। এ ফুলে বিমোহিত হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার মুখ কবিতায় লিখেছেন- ‘ভাঁট আশঁ শ্যাওড়া বন বাতাসে কী কথা কয় বুঝি নাকো, বুঝি নাকো চিল কেন কাঁদে, পৃথিবীর কোনো পথে দেখি নাই হায়, এমন বিজন পথের ধারে দু প্রান্তে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম গ্রহন করে থাকে’।

ভাঁট বা ভাইট ফুল নিয়ে কবির এমন বর্ণনার বাস্তবতায় কুমিল্লার চান্দিনায় দেখা মেলে ভাঁট ফুলের।

বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক এ উদ্ভিদটি সকলের প্রিয়। বসন্তের আগমনে পলাশ-শিমুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফোটে। ভাঁট ফুলের শুভ্রতা আর সুগন্ধ মানুষকে বিমোহিত করে। অঞ্চলভেদে ঘেটু, ভাটিফুল, বুনো জুঁই নামে পরিচিত।

বাগান, পরিত্যক্ত মাঠ, বন, রাস্তা কিংবা জলাশয়ের পাশে ভাঁট ফুলের ঝোপ চোখে পড়ে। গাছ লম্বায় সাধারণত চার ফুট পর্যন্ত হয়। কাণ্ড মোটামুটি শক্ত প্রকৃতির, পাতা সবুজ বর্ণের—দেখতে তামাক পাতার মতো। ফুল থেকে বীজ হয়।

বীজের রং কালো। বীজ এবং কন্দ এই দুই মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। ফুলের রং সাদা। সাদা ফুলের মাঝখানে হালকা বেগুনি আভা থাকে।

এ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম, ক্লেরোডেনড্রাম ভিসকোসাম। ইংরেজি নাম হিল গেন্টারি বোয়ার ফ্লাওয়ার। ভাঁট ফুলের আদি নিবাস ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অঞ্চলে। এতে পাঁচটি পাপড়ি ও সমসংখ্যক লম্বা কিশোর থাকে। প্রাকৃতিক মধুর অন্যতম উৎস এ ফুল; মৌমাছি, ভ্রমর বা অন্যসব কীটপতঙ্গ মধু সংগ্রহে এলে এর মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটে।

ভাট ফুলের ঔষধি গুন সম্পর্কে ভেষজ চিকিৎসক আবুল কালাম জানান, এই ফুলের রয়েছে চমৎকার ভেষজগুণ। বিশেষ করে চর্ম রোগীরা ভাঁট ফুলের রস দিনে দুই বার ক্ষত স্থানে মালিশ করলে দ্রুত সেরে যায়।

অনেক সময় বিষাক্ত পোকা মাকড় কামড় দিলে এই ভাঁট ফুলের রস করে ক্ষত স্থানে মালিশ করলে ফোলা ও ব্যথা দ্রুত কমে যায়। জ্বর, মাথাব্যথা, চর্মরোগ, কৃমি ও আমাশয় প্রতিরোধে এটি দারুণ কার্যকর।

গরু-ছাগলের গায়ে উকুন হলে ভাট গাছের পাতা বেটে দুই-তিন দিন লাগালে উকুন মরে যায়।সনাতন ধর্মাবলম্বীরা চৈত্রসংক্রান্তিতে চর্মরোগ নিবারণের জন্য ভাঁটফুলের আরাধনা করে।

আরও পড়ুন