
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মঙ্গলবার (২০ মে) বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট-নির্ভর ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক। এর ফলে দেশের শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকাতেও উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো। বাংলাদেশ সরকার এবং স্টারলিংক উভয়েই গতকাল এক্সে দেওয়া পোস্টের মাধ্যমে এই বাণিজ্যিক সেবার শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তবে, প্রাথমিকভাবে স্টারলিংকের ‘রোম’ বা ভ্রাম্যমাণ সেবার অনুমোদন এখনও দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। তাই ব্যবহারকারীরা বর্তমানে কেবল ‘রেসিডেন্সিয়াল’ অপশনটি ব্যবহার করতে পারবেন।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি–বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব স্টারলিংকের সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, স্টারলিংকের ‘সেটআপ’ সরঞ্জামের জন্য এককালীন খরচ হবে ৪৭ হাজার টাকা। বর্তমানে দুটি প্যাকেজ চালু করেছে স্টারলিংক: ‘স্টারলিংক রেসিডেন্স’ যার মাসিক খরচ ৬ হাজার টাকা এবং ‘রেসিডেন্স লাইট’ যার মাসিক খরচ ৪ হাজার ২০০ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, একটি ডিভাইস থেকে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মিটার পর্যন্ত ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। গ্রামীণ পরিবেশে এর রেঞ্জ ৫০ থেকে ৬০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ব্যক্তিবিশেষ যেমন এই সেবা নিতে পারবেন, তেমনি একাধিক ব্যক্তি সমিতি আকারে কিনেও এটি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারবেন।
স্টারলিংক তার উচ্চগতির জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। প্রত্যন্ত বা দুর্গম অঞ্চল, যেখানে প্রথাগত ইন্টারনেট সেবা পৌঁছাতে পারে না, সেখানে স্টারলিংক সহজেই নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানে সক্ষম। স্টারলিংকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড) গতিতে আনলিমিটেড (সীমাহীন) ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান ও শ্রীলঙ্কায় স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
কীভাবে অর্ডার করবেন?
বাংলাদেশের গ্রাহকরা স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (starlink.com) থেকে সরাসরি অর্ডার করতে পারবেন। অর্ডার করতে হলে https://www.starlink.com/map?country=BD লিংকে গিয়ে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
১. আপনার ঠিকানা লিখে “Order Now” এ ক্লিক করুন। ২. ড্রপডাউন মেনু থেকে প্রস্তাবিত ঠিকানাটি নির্বাচন করুন। ৩. পছন্দের প্যাকেজটি বেছে নিয়ে “Check Out” চাপুন। ৪. যোগাযোগের তথ্য ও পেমেন্ট ডিটেইলস দিয়ে “Place Order” চাপুন।
অর্ডার নিশ্চিত হলে স্টারলিংক কিট ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে।
প্যাকেজ ও মূল্য:
বাংলাদেশে স্টারলিংক প্রাথমিকভাবে দুটি রেসিডেনশিয়াল প্যাকেজ দিচ্ছে:
- স্টারলিংক রেসিডেনশিয়াল: মাসিক ৬,০০০ টাকা
- রেসিডেনশিয়াল লাইট: মাসিক ৪,২০০ টাকা
উভয় প্যাকেজেই আনলিমিটেড ডেটা ও সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস স্পিড পাওয়া যাবে। তবে, এককালীন হার্ডওয়্যার কিটের জন্য ৪৭,০০০ টাকা দিতে হবে।
সহজ ইনস্টলেশন:
স্টারলিংক কিটটি গ্রাহক নিজেই সহজে ইনস্টল করতে পারেন। শুধু ডিসের জন্য খোলা আকাশমুখী একটি জায়গার প্রয়োজন হয়। দেশের যেসব জায়গায় এখনো নির্ভরযোগ্য ব্রডব্যান্ড পৌঁছায়নি, সেখানে স্টারলিংক একটি অত্যন্ত কার্যকর সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।