কুমিল্লা জেলায় আগাম জাতের বোরো ধান কাটা ও মাড়াই এর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষকরা। একই সাথে স্বপ্নের সোনালী ফসল পাকা ধান কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করছে । তাই তো শত কষ্টের মাঝেও এসব চাষীদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে সোনালী হাসি।
নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে যেন মুখরিত হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলের মাঠ ও বাড়ি ঘর । চলতি মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় মোচার আঘাত হানার আগেই কেটে নেওয়া হচ্ছে স্বপ্নের সোনালী ফসল। আবাদকৃত জমির প্রায় সব ধানই বাড়ি-ঘরে উঠবে এমনটি আশা করছেন চাষিরা। পোকার আক্রমণ হিট রোগ আর নানা রোগবালাইয়ের পরও এ বছর ইরি-বোরো ধানের এবারও বাম্পার হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকের ঘরে এখন পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ। মাঠে প্রতিটি ধানের শীষে যেন কৃষকের রক্তপানি করা কান্তিমাখা জীবনের স্বপ্ন জড়িয়ে রয়েছে। তার পরও বাম্পার ফলন আর ঈদের আনন্দে মাঠে মাঠে ধান কাটার উৎসব বইছে।
জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সিদলাই গ্রামের কৃষক আবদুল খালেক বলেন, এ মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। ফলন বৃদ্ধিতে শুরু থেকেই কৃষি কর্মকর্তারা তাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শসহ সহযোগিতা করেন। এ পর্যন্ত আগাম ২ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। বাকি ধান আগামী সপ্তাহে কাটা হবে। তিনি আরও বলেন, সার-সেচসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ায় এ বছর তার জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করায় প্রতি বিঘায় তিনি ২০-২২ মণ ধান পেয়েছেন।
বুড়িচং উপজেলা রাজাপুর গ্রামের কৃষক কবির উদ্দিন বলেন, এ মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ করেন। তবে এ মৌসুমে সার, বীজ, কীটনাশক ও ডিজেলসহ সবকিছুই বেশি দামে কিনতে হওয়ায় আবাদে তার খরচ বেশি হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার তার জমিতে ভালো ধান হয়েছে। তবে কিছু জমিতে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করায় কিছু ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি আগাম জাতের ২ বিঘা জমির ধান কেটেছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যদি ধান কাটা শেষ করতে পারেন তাহলে তিনি লাভবান হবেন।
জেলার আদর্শ সদর উপজেলার কৃষক মির্জা স্বপন বলেন, রোদ বৃষ্টি ভিজে দিন রাত পরিশ্রম করে এ মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। সময় মতো পানি, বীজ, সার পাওয়ায় ও সঠিকভাবে জমির পরিচর্যা করায় ধানের ফলন ভালো ফলন হয়। ১ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাকি ধান কাটা শেষ হবে। ধান ব্যবসায়ী কুদ্দুস জানান, ১১শ টাকা মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। তবে ধানের দাম আরও বাড়বে। খবর: বাসস
এ বিষয়ে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর কুমিল্লা জেলায় ১৬০ হাজার ৮ শত হেক্টর আবাদ লক্ষ্য মাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে, অর্জিত হয়েছে ১৬১ হাজার ৪৫৩ হেক্টর। বিভিন্ন উপজেলার ধানকাটা শুরু হয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৫ পারসেন্ট ধান কাটা হয়েছে। বর্তমানে ধানকাটার জন্য আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে।
এ বছর কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলাজুড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলনে বাঁধ-ভাঙা আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছে কৃষকরা। দিগন্তজোড়া সোনালী ফসলের মনোরম দৃশ্য যেন পেতে রাখা গালিচা। তবে এক সপ্তাহ পরে শুরু হবে ধান কাটার মহোৎসব। প্রচন্ড তাপদাহেও খুব সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সোনালী স্বপ্ন ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত থাকবেন কৃষক-কৃষাণীরা।