কুমিল্লায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনস্থ চান্দিনা, দেবীদ্বার, মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলার প্রায় ৬ লাখ গ্রাহক লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এদিকে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। দুর্ভোগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা। এ ছাড়া ব্যাহত হচ্ছে শিল্প কারখানার উৎপাদন।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর একাধিক সূত্র জানান, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে রয়েছে চান্দিনা, বরুড়া, দেবীদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলা। এই চার উপজেলায় আবাসিক গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার, বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার ও শিল্প গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। ওইসব গ্রাহকের প্রতিদিন পিক আওয়ারে গড়ে চাহিদা রয়েছে ১৫০ মেগাওয়াট এবং অফ পিক আওয়ারে গড়ে ৯৫ থেকে ১০০ মেগাওয়াট। ওই চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ‘সামিট পাওয়ার’ থেকে প্রতিদিন ২০ মেগাওয়াট, দেবপুর গ্রিড থেকে ৪০ মেগাওয়াট, জাঙ্গালিয়া গ্রিড থেকে ৭ মেগাওয়াট, তিতাস গ্রিড থেকে ৩ মেগাওয়াট ও পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁদপুরের কচুয়া গ্রিড থেকে ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে প্রতিদিন ৫৫ থেকে ৬০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে দিন পার করছে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১।
এদিকে ওই চার উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলের গ্রাহকরা জানায়, দিন ও রাতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। জেলার মুরাদনগর উপজেলার হাটাশ গ্রামের পলাশ দত্ত, দেবীদ্বার উপজেলা সদরের বাসিন্দা আতিকুর রহমানসহ একাধিক গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, ‘বিদ্যুৎ আসলে এক ঘণ্টা, আর গেলে দুই ঘণ্টা’! এই ভাবেই চলে বিদ্যুতের আসা যাওয়ার খেলা।
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান জানান, অতিরিক্ত লোডশেডিং তীব্র তাপদাহে শিশু থেকে শুরু করে যে কোনো বয়সের মানুষ হিট স্টোক করতে পারে। হৃদরোগ এবং উচ্চরক্তচাপ ঘটারও সম্ভাবনা থাকে। ঘামাচির মতো চামড়ায় চুলকানি এবং এক ধরনের চর্ম রোগ হিট র্যাশ হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত গরমে শিশুদের এলার্জি জনিত ঠান্ডা-কাশি থেকে শুরু করে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। ভর্তি রোগীদের আমরা চিকিৎসা দিলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
চান্দিনার বেলাশহর এলাকায় অবস্থিত ডেনিম প্রসেসিং প্লান্টের পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন জানান, আমাদের কাজ চলাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ ছাড়া এক মিনিটও চলে না। বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর দিয়ে চালিয়ে রাখতে হয় প্রতিষ্ঠানটি। আগে প্রতি মাসে ডিজেল খরচ ১ লাখ টাকা লাগতো। এখন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকায় প্রতিদিনের ডিজেল খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা! যার ফলে পণ্য উৎপাদনে অনেক খরচ বাড়ছে। শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু রায়হান জানান, এখন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাচ্ছি তাতেও মোটামুটি চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। তারচেয়ে কম পেলে সমস্যা আরও প্রকট হবে।