মার্চ ১৭, ২০২৫

সোমবার ১৭ মার্চ, ২০২৫

কুমিল্লায় ঈদের কেনাকাটা: ক্রেতার ভিড়ে নেই পা ফেলার জায়গা

বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় | ছবি: রাইজিং কুমিল্লা

রমজান মাসের মাঝামাঝি সময় পার হলেই জমে ওঠে কুমিল্লার ঈদ বাজার। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদ বাজারে প্রায় শত কোটি টাকার পোশাক বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

এবার বাজারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দেশীয় পোশাকের আধিপত্য। অন্যান্য বছর ভারতীয় সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে বিভিন্ন পোশাক জনপ্রিয় হলেও এবার বাজারে সেগুলোর উপস্থিতি নেই। ফলে দেশীয় ডিজাইনের পোশাকের বিক্রি বেড়েছে।

শনি ও রবিবার (১৫-১৬ মার্চ) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরীর সাত্তার খান কমপ্লেক্স, প্ল্যানেট এসআর, রূপায়ণ দেলোয়ার টাওয়ার, খন্দকার হক টাওয়ার, কিউআর টাওয়ার, ইস্টার্ণ এয়াকুব প্লাজা, এসবি প্লাজা, হিলটন টাওয়ার, নিউ মার্কেট, কুমিল্লা টাওয়ার, সিল্ভার রহমান ভিলার আড়ং ও লারিভ, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গোমতী টাওয়ার, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় হোয়াইট হাউজ শপিং সেন্টারে সকাল থেকে রাত অব্দি পছন্দের পোষাক ও ঈদ অনুষঙ্গ খুঁজে বেড়াচ্ছে ক্রেতারা। ফলে তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের।

বিশেষ করে পুরুষ ক্রেতার চেয়ে নারী ক্রেতার সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। পছন্দের পোশাক কিনতে ঘুরছেন এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে।

ছবি: রাইজিং কুমিল্লা

প্লানেট এস আর শপিং কমপ্লেক্সের মেহরিয়ান-এর স্বত্বাধিকারী মেহজাবীন রাইজিং কুমিল্লাকে জানান, ‘পবিএ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সব ধরনের ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে নারীদের জন্য আছে সারারা, গারারা, নায়রা ও গাউন, থ্রি-পিস, লেডিজ টপস, বিভিন্ন ডিজাইনের কুর্তি-প্যান্টসহ বাজেটের মধ্যে পোশাক। পোশাকের দাম ধরা হয়েছে ১,০০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে ২-৪ হাজার টাকার মধ্যেই ভালো মানের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে, যা ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।’

কুমিল্লা সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী ইসরাত রাইজিং কুমিল্লাকে বলেন, ‘নতুন ডিজাইনের দেশীয় পোশাক আসায় ভালো লাগছে।’

এদিকে গরমকে সামনে রেখে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে থ্রি-পিস, লেডিজ টপস, বিভিন্ন ডিজাইনের কুর্তি-প্যান্ট, শাড়িসহ বাহারি ডিজাইনের দেশি পোশাক। তরুণীদের পোশাক এক হাজার থেকে শুরু করে দশ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

ছোটদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। মেয়ে শিশুদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে লং ফ্রক ও পার্টি ফ্রক। এ ছাড়া মার্কেটগুলোতে উঠেছে লেহেঙ্গা ও লং কামিজেরও চাহিদা রয়েছে। ছেলে শিশুদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে সুতি টি-শার্ট ও বেবি স্যুট। এ ছাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের প্যান্ট।

ইস্টার্ণ এয়াকুব প্লাজার শপিং কমপ্লেক্সের লেডি কেয়ার ও মা প্রসাধনী-এর স্বত্বাধিকারী রাজভীর সোহাগ রাইজিং কুমিল্লাকে জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে ইফতারের পর থেকেই বাড়ছে ক্রেতার সমাগম। আমাদের শপ গুলোতে প্রসাধনীর মধ্যে বিশেষ করে বাহারি ডিজাইনের চুড়ি থেকে শুরু করে জুয়েলারি আইটেমের বিক্রি বেড়েছে।

অপরদিকে ঈদে তরুণদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। তবে প্রতিবারের মতো এবারেও ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবির সমাহার দেখা গেছে মার্কেটগুলোতে। তবে পাঞ্জাবি কেনার ক্ষেত্রে মার্কেটের চেয়ে কুমিল্লার খাদি দোকানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে অনেক বেশি।

এসবি প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের রিলোড-এর স্বত্বাধিকারী আরিফুর রহমান বাবু রাইজিং কুমিল্লাকে জানান, ‘এবার ছেলেদের মধ্যে জগার্স প্যান্ট, শার্ট ও গেঞ্জির চাহিদা বেশি। এছাড়া পাঞ্জাবি পায়জামাও বিক্রি হচ্ছে। ঈদকে কেন্দ্র করে দৈনিক গড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০,০০০ থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত। সামনে আরও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।’

ছবি: রাইজিং কুমিল্লা

হাউজিং থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা এক দম্পওির সঙ্গে কথা হয় রাইজিং কুমিল্লার। এই দম্পওি জানান, ‘সন্তানদের জন্য পোশাক কিনতে এসে দেখছেন ২ হাজার টাকার নিচে ভালো মানের পোশাক পাওয়া কঠিন।’

প্রাইভেট চাকরিজীবী জসিম আহমেদ রাইজিং কুমিল্লাকে বলেন, ‘পরিবারকে খুশি করতে চাই, কিন্তু গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম ৩০০-৫০০ টাকা বেশি হওয়ায় বাজেটের সঙ্গে তাল মিলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু ক্রেতা দাম বাড়লেও মানের কারণে সন্তুষ্ট।’

কুমিল্লা নগরীর লাকসাম রোডস্থ খাদি কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় হচ্ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে খাদি পাঞ্জাবির যোগান ও চাহিদা উভয়ই বাড়ছে। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল মিলিয়ে খাদি পাঞ্জাবির সমাহার রয়েছে নগরীর রাজগঞ্জ মনোহরপুর, কান্দিরপাড়ের দোকানগুলোতে।

চাঁদপুর জেলা থেকে আসা এক ক্রেতা রাইজিং কুমিল্লাকে বলেন, ‘খাদি কাপড়ের পাঞ্জাবি কিনতে এসেছি কুমিল্লাতে। প্রতিবারই আসা হয় আমাদের’

কয়েকজন খাদি কাপড় বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয় রাইজিং কুমিল্লার। তারা জানান, ‘পাঁচশ থেকে আড়াইহাজার টাকার মধ্যে খাদি পাঞ্জাবি বিক্রয় করছেন তারা। সিল্কের ব্যবহার করে খাদি পাঞ্জাবির আকর্ষণীয়তা বাড়ানো হচ্ছে।’

ছবি: রাইজিং কুমিল্লা

শুধু বিপণিবিতান নয়, শহরের ফুটপাতের দোকানগুলোতেও সমান ভিড়। রিকশাচালক আব্দুল রহিম জানান, পরিবারের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন, কিন্তু বড় মার্কেটে দাম বেশি হওয়ায় ফুটপাত থেকেই কেনাকাটা করার চেষ্টা করছেন।

কুমিল্লা টাউন হলের সামনের ফুটপাতের বিক্রেতা মোতালেব রাইজিং কুমিল্লাকে জানান, ‘শুধু স্বল্প আয়ের মানুষ না মধ্যবিওরাও আমাদের কাছ থেকে পছন্দের কাপড় কিনছেন। বিক্রিও বেড়েছে। তবে এবার ভিড় আগের তুলনায় বেশি’

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘ঈদের বাজার নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ রবিবার থেকে ২৪ ঘণ্টা পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব এলাকায় অপরাধ বেশি সংঘটিত হয়, সেসব এলাকায় বিশেষ নজর দেওয়া হবে।’