কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ১২৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেছে।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দিনটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে কেক কেটে এবং বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করা হয়।
১৮৯৯ সালের এই দিনে আনন্দচন্দ্র রায় রানি ভিক্টোরিয়ার নামে এ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ’৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ কলেজের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল অনন্য। কলেজটি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নানা বির্বতন ও বিকাশের মধ্য দিয়ে কলেজটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশে ব্রিটিশ ভারতে প্রথম পর্যায়ে যে কয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ তার মধ্যে অন্যতম।
তিতাশ চৌধুরী লিখেছেন, ‘প্রাচীনত্বের বিচারে এ কলেজটি বুড়োদের দলেই পড়ে। মূলত এইটিই ছিল পূর্বাঞ্চলীয় অন্ধকার যুগের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক’। পাকিস্তান সৃষ্টির পর এ কলেজের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা চালানো হয়। ‘ভিক্টোরিয়া’ শব্দটি ছেঁটে ফেলে দেয়ার চিন্তা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তা আর হালে পানি পায়নি।
বর্তমানে কলেজটি দুটি অংশে বিভক্ত। শহরের কান্দিরপাড় রানীদীঘির পাড়ে কলেজের ইন্টারমিডিয়েট শাখা এবং ধর্মপুরে অনার্স শাখা অবস্থিত। প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় কলেজটি মুখরিত হয় প্রতিদিন। ২২টি বিষয়ে অনার্স ও ১৮টি বিষয়ে মাস্টার্স পড়ানো হয় এখানে। এ কলেজে রয়েছে ১২টি সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংগঠনগুলো শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে অবদান রাখছে।
ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে কলেজটির ভূমিকা ছিল অনন্য। উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ শচীন দেববর্মণ, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, অদ্বৈত্য মল্লবর্মণ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, হানিফ সংকেত এর মতো অসংখ্য খ্যাতনামা সাবেকদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে ভিক্টোরিয়ার ক্যাম্পাস।
এদিকে, শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান বলেন, ইতিহাসের ধারক ও বাহক অবিভক্ত ভারত বর্ষের প্রাচীন এ বিদ্যাপিঠ। শুধু শিক্ষা বিস্তারে নয় এ অঞ্চলের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নয়নে এ কলেজটি ভূমিকা চির স্মরনীয়। এ কলেজটি শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ অগনিত আলোকিত মানুষ জন্ম দিয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ মৃনাল কান্তি গোস্বামী, শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক মোহাম্মদ মঈন উদ্দীনসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীবৃন্দ। আলোচনা শেষে কলেজ শিক্ষার্থীদের পত্রিকা ক্যাম্পাস বার্তার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।