পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকা, জনবল সংকট ও জায়গার অভাবে আধুনিক সরঞ্জাম বসাতে না পারাসহ নানারকম সমস্যায় জর্জরিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার। বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ৯২৪ জন। এই শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ৫ জন ডাক্তার রয়েছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, মেডিকেল সেন্টার শুধু নামমাত্র। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মেডিকেল সেন্টারকে প্যারাসিটামল সেন্টার নামেই জানেন। শিক্ষার্থীরা যে সমস্যা নিয়ে যাক না কেন, তাদের শুধু প্যারাসিটামল সরবরাহ করা হয়। বাকী ওষুধপত্র কিনতে হচ্ছে বাহির থেকে।
জানা গেছে, প্রতি রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯.০০ টা থেকে দুপুর ১.০০ টা পর্যন্ত ডাক্তার বসেন মেডিকেল সেন্টারে। তবে বিকাল ৪.০০ টা পর্যন্ত মেডিকেল সেন্টার খোলা থাকে। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত কোন ডাক্তার বসেন না। ফলে কোন শিক্ষার্থী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সংশ্লিষ্ট কেউ অসুস্থ হলে মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বেশিরভাগ সময় প্রেসক্রিপশন পাওয়া গেলেও সব ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে না।
মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার উত্তর অংশে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) মেডিকেল সেন্টার অবস্থিত। যেখানে পাঁচজন ডাক্তার, একজন সিনিয়র নার্স এবং একজন সহকারী রেজিস্ট্রার দায়িত্ব পালন করছেন। এ দিকে প্রতিবছর মেডিকেল সেন্টারের জন্য ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা ইন্সট্রুমেন্ট ও বাকি ৪ লাখ টাকা ওষুধ ক্রয় বাবদ খরচ হয়। মাসান্তে ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয় ওষুধ ক্রয় করার জন্য— যার মধ্যে ৩ হাজার ১০০ টাকা থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। সর্বমোট ১২ পদের ওষুধ ক্রয় করা হয়।
যা মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় অপ্রতুল। ২০২৩ সালে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি থেকে শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে কিছু আধুনিক মেডিকেল সরঞ্জাম প্রদান করা হয়। যার মধ্যে দুটি বেড, একটি এক্স-রে ভিউ বক্স, একটি ইসিজি মেশিন, একটি অপারেশন-সামগ্রী জীবাণু মুক্ত করার অটোক্লেব মেশিন রয়েছে। তবে অপারেটর ও পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
বেশ ক’জন শিক্ষার্থী জানান, ডাক্তাররা নিয়মিত মেডিকেল সেন্টারে বসেন না। এতে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি যে সব ঔষধ প্রেসক্রাইভ করা হয় তার বেশিরভাগ মেডিকেল সেন্টার থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ ওষুধ বাহির থেকে ক্রয় করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এ নিয়ে কথা হয় তানভীর হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসের আশেপাশে বসবাস করে। বিভিন্ন সময় কেউ নিম্ন রক্তচাপ, কেউ উচ্চ রক্তচাপ, কেউ রক্তশূন্যতা, জ্বর-ঠান্ডা, কাশি, গ্যাস্ট্রিকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হলে মেডিকেল সেন্টারে যায়। সেখানে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সেবা না পেয়ে তাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের উপর ভর করতে হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যে-সব রোগে ভোগেন তার অধিকাংশ ঔষধ এখানে নেই।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আসলাম বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা প্রদানে ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে মেডিকেল সেন্টারে আসলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও চিকিৎসকের অভাবে সঠিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। সার্বক্ষণিক সেবা দিতে না পারায় প্রাথমিক সেবার অভাব লক্ষ্য করা গেছে।’
এ বিষয়ে দপ্তর প্রধান ডা. মাহমুদুল হাসান খান বলেন, ‘সরঞ্জাম ব্যবহার করতে অপারেটর লাগবে। ইসিজি এমন খোলা জায়গায় ব্যবহার করা যায় না। যা আমাদের এখানে নেই। এছাড়াও এখানে ডাক্তারেরও সংকট রয়েছে৷ ঔষধের বাজেট বৃদ্ধি, বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ডিউটি দেওয়ার জন্য দু’জন চিকিৎসক, দু’জন নার্স, দু’জন ফার্মাসিস্ট এবং দু’জন অফিস সহায়ক নিয়োগের জন্য আমরা আবেদন করেছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘এই ব্যাপারে ডাক্তারদের সাথে আমার আলোচনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তব্যরত ডাক্তাররা এখানে চাকরি করার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে প্র্যাক্টিস করেন। তাদের রিফর্ম করা যাবে না, বেশি চাপ দিলে তারা চাকরি ছেড়ে চলে যাবেন। এক্ষেত্রে আরও ডাক্তার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, যারা বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ডিউটি দিবে। আমরা ওষুধের পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছি।’