চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার অনলাইন ক্লাসের পরিবর্তে অফলাইন ক্লাসে ফিরলেও চালু হয়নি নীল বাস। শুধুমাত্র দুটি সিডিউলে চলছে বিআরটিসির ৮ টি লাল বাস। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের একটি ক্লাস থাকলেও সকাল আটটার বাসে ক্যাম্পাসে এসে, দুপুর ২ টার বাসে ফিরতে হচ্ছে তাদের। এনিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৭ জুলাই সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২তম জরুরি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সভায় সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার শুধুমাত্র অনলাইনে ক্লাস ও নিজস্ব এবং ভাড়াকৃত যানবাহনসমূহের ব্যবহার সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরে ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর ৭৮তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সভার আলোচ্যসূচি ১৯ অনুযায়ী অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়ায় ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে বৃহস্পতিবার সশরীরে ক্লাস নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধন নীতি অনুযায়ী অর্ধবেলা (দুপুর ২টা পর্যন্ত) চলবে ক্লাস।
উক্ত দিন পরিবহণ সেবা শুধুমাত্র দুইবার প্রদানের জন্যও সুপারিশ করা হয়। সকাল ৮টায় শিক্ষার্থী নিয়ে বাস ক্যাম্পাসে আসবে এবং দুপুর ২টায় আবার ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে শহরে যাবে। যদিও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের এ সিদ্ধান্ত পরিবহণ পুলকে না জানিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি পরিবহণ পুলের।
এ দিন দুইবার পরিবহন সেবা প্রদান ও নিজস্ব সাতটি নীল বাস বন্ধ রাখার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পরিবহনে ফিটনেসবিহীন বাস পাঠিয়ে দায়সাড়াভাবে চুক্তি রক্ষা করছে বিআরটিসি। ফলে বিআরটিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ বাড়ছে শিক্ষার্থীদের।
হাসিবুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বৃহস্পতিবার মাত্র দুই শিফটে লাল বাস চলাচল করে। যা শিক্ষার্থীদের সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। আবার এদিন অনেকে বাড়িতে যাওয়ার কারণে দুপুর দুইটার বাসে অনেক ভিড় হয়। প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বাসের সংখ্যা বাড়ানো।
ঊর্মিলা আকতার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়মে চলে। শুধুমাত্র কৃচ্ছতা সাধন করা হয় শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। বৃহস্পতিবার টিচাররা একটা ক্লাস দেয়। এই একটা ক্লাস করার জন্য কোন স্টুডেন্ট সকাল ৮টার বাসে গিয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত বসে থাকবে। এক্ষেত্রে দেখা যায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভাড়ায় চালিত পরিবহনে বাসায় ফিরে।
শফিকুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থাকার পরেও যদি আমরা ভাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে যেতে হয় তাহলে বিষয়টি হতাশাজনক। এভাবে শিক্ষার্থীরা যদি ভাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে যায় তাহলে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধন হলেও আমাদের তো কৃচ্ছতা সাধন হচ্ছে না। এখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত পরিবারের। এমন বাস থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিআরটিসি চালক বলেন, বৃহস্পতিবারের লাল বাসগুলোতে অনেক ভিড় হয়। ছেলে মেয়েরা বাসে দাঁড়ানোরও জায়গা পায় না। এইদিন যদি লাল বাসের পাশাপাশি নীল বাসগুলোও চালু রাখা হয় তাহলে সবার জন্যই সুবিধা হবে।
পরিবহণ পুলের সেকশন অফিসার মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বাসে ভিড় হয় এ ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। আমরা আগামী সপ্তাহে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এই ব্যাপারে উপাচার্যের সাথে কথা বলবো। আমাদের কী পরিমাণ বাজেট রয়েছে সব কিছু চিন্তা করে আমরা বাসের শিডিউল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবো। আমরা মিটিং করে অতি শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নিব।