
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “যখন কোনো তরুণী মা পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছেড়ে দেন, অথবা কোনো ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, তখন বাংলাদেশ হারায় সম্ভাবনা, উৎপাদনশীলতা এবং অগ্রগতি।”
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপির লক্ষ্য একটি আধুনিক, গণমুখী বাংলাদেশ গড়ে তোলা—যেখানে কোনো নারীকে তার পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে একটি বেছে নিতে না হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য তুলে ধরে তারেক রহমান জানান, দেশে পুরুষদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার ৮০ শতাংশ হলেও নারীদের হার মাত্র ৪৩ শতাংশ। “এই বৈষম্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমরা জাতির অর্ধেকেরও বেশি মেধা ও দক্ষতাকে পিছনে ফেলে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।
তারেক রহমান জানান, বিএনপি সারাদেশে শিশু পরিচর্যা (ডে-কেয়ার) সুবিধাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বিএনপির পরিকল্পনার মধ্যে যা যা রয়েছে:
সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন; সরকারি অফিসগুলোতে ধাপে ধাপে ডে-কেয়ার সেন্টার চালুর জাতীয় পরিকল্পনা;
বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলক ডে-কেয়ার ব্যবস্থা; শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখা নিয়োগকর্তাদের জন্য কর সুবিধা ও সিএসআর ক্রেডিট প্রদান; নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মান অনুযায়ী কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “এই একটি সংস্কার নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে, পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করতে পারে, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আর্থিক স্থিতিশীলতা দিতে পারে এবং আমাদের জিডিপিতে ১ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করতে পারে।”
তারেক রহমান আরও বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরতদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএফসি ও আইএলও’র গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা আছে, সেখানে কর্মী ধরে রাখার হার বেশি এবং অনুপস্থিতি কম।
তিনি মন্তব্য করেন, “শিশু পরিচর্যা কোনো দয়া নয়, এটি সামাজিক-অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অপরিহার্য অংশ। যেমন সড়ক বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে-কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মজীবনে সাফল্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে।”
বিএনপির ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০৩৪ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারী, গর্বের সঙ্গে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন যে কোনো পশ্চাৎমুখী ধারণা প্রত্যাখ্যান করি যা নারীর সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে। শিশু পরিচর্যা, সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন শুধু ন্যায়সঙ্গত নয়, এটিই একটি বুদ্ধিবৃত্তিক অর্থনীতি।”
তারেক রহমান আহ্বান করে বলেন, “আসুন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ি, যেখানে প্রতিটি কর্মজীবী মা ও প্রতিটি ছাত্রী নিজের সাফল্যের স্বাধীনতা পায়, এবং যেখানে সমাজের যত্ন ও সহযোগিতাকে অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।”









