জানুয়ারি ১৩, ২০২৫

সোমবার ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

এইচএমপিভি ভাইরাস থেকে বাঁচতে যেসব সতর্কতা অনুসরণ করতে পারেন

GIRL WEARING MASK IN PUBLIC
প্রতীকী ছবি/পেক্সেলস

চীনের উত্তর অঞ্চলে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ায় বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ইতোমধ্যে এইচএমপিভি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

এদিকে এশিয়ায় জাপান, মালয়শিয়া ও ভারতের পর এবার বাংলাদেশেও শনাক্ত হলো চীনে আতঙ্ক ছড়ানো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসে (এইচএমপিভি) আক্রান্ত রোগী। আক্রান্ত রোগী একজন নারী, যার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায় বলে জানা গেছে।

রবিবার (১২ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ নওশের আলম।

তিনি বলেন, “একজন ব্যক্তির শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাসের পাশাপাশি আরও একটি ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।”

তবে জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচএমপিভি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। তাদের ধারণা, অনেক আগে থেকেই এ ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল পৃথিবীতে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সিডিসি বলছে, ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়।

এদিকে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, এইচএমপিভি ভাইরাসটিতে প্রতিবছরই বাংলাদেশে দু-চারজন রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন।

জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই বা তার বেশি মানুষের মধ্যে সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। এছাড়া সংক্রমিত স্থান স্পর্শ করলে তা থেকেও ভাইরাসটি ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।

তবে ৫ বছর আগে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যে মহামারিতে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যান। কোভিড-১৯ ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়িয়েছিল বলেই ধারণা করা হয়। এ অবস্থায় চীন থেকে আরেকটি ভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

সিডিসি বলছে, এইচএমপিভি সাধারণত আক্রান্ত মানুষের হাঁচি বা কাঁশি থেকে ছড়ায়। এছাড়া স্পর্শ বা করমর্দনের মত ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এইচএমপিভি ছড়াতে পারে। এইচএমপিভি রয়েছে এমন বস্তু বা স্থান স্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাঁশির ড্রপলেট লেগে থাকা স্থান যেমন দরজার হাতল, লিফটের বাটন, চায়ের কাপ ইত্যাদি স্পর্শ করার পর সে হাত চোখে, নাকে বা মুখে ছোঁয়ালে এইচএমপিভি ছড়াতে পারে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই ধরনের পদক্ষেপে এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব মত বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের।

চলুন জেনে নেওয়া যাক এইচএমপিভি প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে –

  • বাইরে গেলেই মাস্ক পরা
  • ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া
  • হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা
  • আক্রান্তদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলা
  • হাঁচি কাশি দেয়ার সময় মুখ টিস্যু দিয়ে ঢেকে নেওয়া এবং ব্যবহৃত টিস্যুটি সঙ্গে সঙ্গে মুখবন্ধ করা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে হাত সাবান পানিতে ধুয়ে ফেলা
  • যদি টিস্যু না থাকে তাহলে কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি দেওয়া
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা
  • সর্দিকাশি, জ্বর হলেও অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
  • জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচএমপিভির কারণে শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশে মাঝারি ধরনের সংক্রমণ হয়। বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণকে ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ থেকে আলাদা করা যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে সর্দি–কাশি ও জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা যায়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এইচএমপিভিকে “শীতজনিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা” হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, এইচএমপিভি আক্রান্ত হলে সাধারণ ফ্লুর লক্ষণ দেখা যায়; যা সাধারণত দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে লক্ষণ তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি হতে পারে।

ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে মারা যাওয়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১% এর মৃত্যুর জন্য দায়ী এইচএমপিভি।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা বা ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ আক্রান্তরা, সেইসঙ্গে সিওপিডি, অ্যাজমা ও পালমোনারি ফাইব্রোসিসের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের রোগীদের মাঝে সংক্রমণের লক্ষণগুলো গুরুতর আকারে দেখা দিতে পারে। এমনকি তাদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই জটিল রোগের আক্রান্তদের এমন লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা করা যাবে না।

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এই ভাইরাস প্রতিরোধে কয়েকটি টিকা তৈরি করা হলেও এইচএমপিভি প্রতিরোধ এখনও সে ধরনের কোনো টিকা নেই। তাই সতর্ক থাকার ওপরেই জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।