কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে অন্যায়ভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা নতুন বৈষম্যের সৃষ্টি বলে জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসব বিষয় উল্লেখ করে বুধবার রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে নানা গুঞ্জন।
কুবি শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিদায়ী সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়া পদত্যাগ দাবি করা ‘অন্যায়’। যা নতুন বৈষম্যের সৃষ্টি করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট প্রথমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেন। এরপর বুধবার (১৪ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ উপ-উপাচার্যকে অন্যায়ভাবে পদত্যাগ করতে বলায় রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানান।
এতে উপ–উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য বাধ্য করে নতুন বৈষম্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে শিক্ষার্থীরা কিছুতেই সেটা মেনে নিবে না উল্লেখ করে তাকে বিনা কারণে পদত্যাগে বাধ্য করে বৈষম্য সৃষ্টি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সরে আসার অনুরোধ জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের পদত্যাগ নিশ্চিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অফলাইনে ক্লাস পরীক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শুরু থেকেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর সারাদেশে প্রথম পুলিশি হামলাকারী উপাচার্য , যিনি যোগদানের পর থেকে বিতর্কিত প্রক্টরের মদদদাতা, দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গেয়ে, বলপ্রয়োগ করে অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগদখল, কুবির মাননীয় উপ–উপাচার্য স্যারকে বঞ্চিত করে একাই দুটি গাড়ি ব্যবহার, পছন্দের প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, চিহ্নিত খুনি মাজেদকে নিয়োগসহ বিভিন্ন অন্যায় কাজের মাধ্যমে বৈষম্যের সার্টিফিকেটদাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আব্দুল মঈনের পদত্যাগের দাবী জানানো হয়।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই দাবীকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ–উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে জড়ানো হচ্ছে। যিনি শুরু থেকেই যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন। তাঁর এমন কোন প্রকার কার্যক্রম শিক্ষার্থীরা দেখেনি, যেগুলো প্রমাণ করতে পারে প্রো-ভিসি বৈষম্যের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। তাই কোন কারণ ছাড়া একজন প্রো-ভিসিকে পদত্যাগ করতে বলাটা নতুন বৈষম্যের নজির সৃষ্টি করবে বলে তারা মনে করেন।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গত ১৭ জুলাই যখন কুমিল্লা শহর থেকে ‘যুবলীগ হামলা করতে আসছে’ বলে গুজব রটে তখন প্রোভিসি স্যার সাথে সাথে আবাসিক হল গুলোতে এসে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্রদের খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি তাদের অভয় দিয়ে পাশে থাকেন। একইরকম পরেরদিন ১৮ জুলাই যখন শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয়, তখন কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে প্রো-ভিসি স্যার চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং যত্ন নেন।
এছাড়াও কুবির চিহ্নিত খুনী মাজেদকে নিয়োগকালে তার বিরুদ্ধে প্রো-ভিসি সিন্ডিকেটে লিখিত নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বৈষম্য ঠেকাতে চেয়েছিলেন। একইরকম যখন সাবেক ভিসি ড. এএফএম মঈন প্রো-ভিসি স্যারকে সকল কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত করছিলেন, তখন তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে লিখিতভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানায়।