নভেম্বর ২২, ২০২৪

শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪

অক্টোবরে ৪৪৩ দুর্ঘটনায় ৪৬৯ প্রাণহানি, বেশি মৃত্যু মোটরসাইকেলে

Rising Cumilla - Road Safety Foundation
প্রতীকি ছবি/সংগৃহীত

চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সড়ক, নৌ ও রেলপথে সারা দেশে ৪৪৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন ৮৩৭ জন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৬.৯৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১.৭৪ শতাংশ।

রোববার (১০ নভেম্বর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র: দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৬ জন (৪১.৭৯%), বাসের যাত্রী ৩১ জন (৬.৬০%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি-লরি আরোহী ২০ জন (৪.২৬%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১২ জন (২.৫৫%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টমটম) ৯৪ জন (২০.০৪%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-ধান মাড়াই গাড়ি-পাওয়ারটিলার) ১০ জন (২.১৩%) এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ৪ জন (০.৮৫%) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন: রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৭৩টি (৩৯.০৫%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৬২টি (৩৬.৫৬%) আঞ্চলিক সড়কে, ৬৪টি (১৪.৪৪%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮টি (৮.৫৭%) শহরের সড়কে এবং ৬টি (১.৩৫%) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন: দুর্ঘটনাসমূহের ১১২টি (২৫.২৮%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৭১টি (৩৮.৬০%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৪টি (২৩.৪৭%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৪২টি (৯.৪৮%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৪টি (৩.১৬%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন: দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক- আঠার চাকার লরি ২৫.৪৮%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ ৪.৩৯%, যাত্রীবাহী বাস ১৪.৪৮%, মোটরসাইকেল ২৮.০৭%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টমটম) ১৭.৫৯%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু–মাহিন্দ্র-হ্যালোবাইক-ধান মাড়াই গাড়ি-পাওয়ারটিলার) ৫.৪৩%, বাইসাইকেল-রিকশা ১.৮১% এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২.৭১%।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা: দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৭৩টি। (বাস ১১২, ট্রাক ১১৯, কাভার্ডভ্যান ২২, পিকআপ ২৫, ট্রাক্টর ৭, ট্রলি ৬, লরি ৯, ড্রাম ট্রাক ৮, আঠার চাকার লরি ১, মাইক্রোবাস ১২, প্রাইভেটকার ১৪, অ্যাম্বুলেন্স ৫, জীপ ৩, মোটরসাইকেল ২১৭, থ্রি-হুইলার ১৩৬ (ইজিবাইক- সিএনজি- অটোরিকশা- অটোভ্যান-টমটম), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪২ (নসিমন- করিমন-ভটভটি- আলমসাধু- মাহিন্দ্র- হ্যালোবাইক-ধান মাড়াই গাড়ি-পাওয়ারটিলার), বাইসাইকেল-রিকশা ১৪ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২১টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ: সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৫.৪১%, সকালে ২৬.৬৩%, দুপুরে ১৬.৯৩%, বিকালে ১৫.৫৭%, সন্ধ্যায় ৯.২৫% এবং রাতে ২৬.১৮%।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান: দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৯.৫৭%, প্রাণহানি ৩০.৭০%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.৩৪%, প্রাণহানি ১৩.৮৫%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৭.৮৩%, প্রাণহানি ১৭.২৭%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯%, প্রাণহানি ৮.১০%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.০৬%, প্রাণহানি ৫.৩৩%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৯৬%, প্রাণহানি ৫.১১%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৮৩%, প্রাণহানি ১১.০৮% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.৩৫%, প্রাণহানি ৮.৫২% ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩১টি দুর্ঘটনায় ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২২টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম মাগুরা, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পঞ্চগড় জেলায়। এই ৪টি জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং ৩৪ জন আহত হয়েছে।

নিহতদের পেশাগত পরিচয়: গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, পুলিশ সদস্য ৩ জন, আনসার সদস্য ২ জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ৯ জন, সাংবাদিক ৪ জন, প্রকৌশলী ২ জন, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৭ জন, বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৬ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২১ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২৭ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৪ জন, পোশাক শ্রমিক ১১ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৬ জন, প্রতিবন্ধী ৪ জন এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন ছাত্রীসহ দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসা ও কলেজের ৫৮ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।