
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের সোনারামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে নূর মোহাম্মদ আকাশ (২৫)। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন চিরতরে ভেঙে যায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি আরবের জিয়াদ এলাকায় একটি পেট্রল পাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়ে প্রাণ হারান আকাশ।
যে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি প্রবাসে গিয়েছিলেন, সেই বাবা-মা এখন তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। দুর্ঘটনার পর কেটে গেছে ৬ মাসেরও বেশি সময়, কিন্তু আজও দেশে ফেরেনি আকাশের লাশ। তার মরদেহ সৌদি আরবের জিয়াদ এলাকার একটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে বলে জানান পরিবার।
আকাশের বাড়িতে এখন কেবলই শোকের মাতম। ছেলে হারানোর শোকে পাথর হয়ে গেছেন মা সাহিদা বেগম। ছেলের ছবি আর ব্যবহৃত জামাকাপড় বুকে জড়িয়ে তার করুণ বিলাপ থামছে না। তার বুকফাটা আহাজারিতে বাড়ির বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশীরাও সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাহিদা বেগম বলেন, “আমার আকাশ আমার কষ্ট দূর করতে বিদেশ গিয়েছিল। আমার কলিজার টুকরা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আপনারা আমার কলিজার লাশটা এনে দিন, আমি তাকে একবার বুকে জড়িয়ে ধরে মাটি দেব, তাহলে আমার বুকটা শান্ত হবে।”
আকাশের বাবা রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, “আমার ছেলেটা মাত্র ৯ মাস আগে বিদেশ গিয়েছিল। এর তিন মাসের মধ্যেই সে মারা গেল। ৬ মাস হয়ে গেল, আমরা লাশটা আনতে পারছি না। সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি, দয়া করে আমার ছেলেটার লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করুন।”
আন্দিকোট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নোয়াব আলী সরকার জানান, আকাশের পরিবার দরিদ্র। তাদের পক্ষে লাশ আনার খরচ বহন করা সম্ভব নয়। তাই তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন সরকারি খরচে আকাশের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমান বলেন, “দুর্ঘটনার বিষয়টি আমাকে আগে জানানো হয়নি। পরিবারের সদস্যরা যদি লিখিত আবেদন করেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”