এপ্রিল ১৬, ২০২৫

বুধবার ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

৫ বছর পর বর্ণাঢ্য আয়োজনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

৫ বছর পর বর্ণাঢ্য আয়োজনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
৫ বছর পর বর্ণাঢ্য আয়োজনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন/ছবি: প্রতিনিধি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ।

বাংলা ১৪৩২ বঙ্গাব্দের আগমন ঘিরে সোমবার (১৪ এপ্রিল) দিনব্যাপী নানা আয়োজনের নববর্ষকে বরণ করে নেয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল উৎসবের প্রাণচাঞ্চল্য।

দিনের শুরুতেই সকাল সাড়ে ৯ টায় কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলীর নেতৃত্বে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বৈশাখী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

এতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা।

শোভাযাত্রা শেষে শুরু হয় বৈশাখী আনন্দ আয়োজন। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় ছেলেদের মোরগ লড়াই ও মেয়েদের মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো গ্রামীণ খেলা, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। লোকগান, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য ও নাটিকা পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা, যা পুরো ক্যাম্পাসে বয়ে আনে বাঙালিয়ানা ছোঁয়া।

পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগ থেকে স্থাপন করা হয় পিঠাপুলির স্টল। এসব স্টলে পরিবেশিত হয় বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা—পাটিসাপটা, চিতই, দুধচিটা, মালপোয়া সহ নানা মুখরোচক খাবার, যা মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মন জয় করে নেয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “বাংলা নববর্ষ বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য। এ উৎসব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মিলনমেলা। স্বল্প সময়ে এমন সফল আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নববর্ষকে উদযাপন করতে পেরে আমরা গর্বিত।”

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, “বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক এই নববর্ষ। নবপ্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম ও সংস্কৃতিচেতনা জাগ্রত করতেই এ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, “এবারের পহেলা বৈশাখ হতে পারে এক নতুন সম্ভাবনার সূচনা। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও স্বচ্ছতার পথ ধরে আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি—এটাই হোক আমাদের নববর্ষের অঙ্গীকার।”

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আয়োজন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায় বাড়তি উচ্ছ্বাস। তাদের মতে, এমন আয়োজন আরও নিয়মিত হলে তা কুবি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নববর্ষের বর্ণিল এই আয়োজনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যেন হয়ে ওঠে একখণ্ড বাংলাদেশ—ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর উৎসবের মেলবন্ধনে উদ্ভাসিত।

উল্লেখ্য, নববর্ষকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র গ্রাফিতি সংগঠন ‘বৃত্ত কুবি’-এর ব্যতিক্রমী উদ্যোগও নজর কাড়ে। রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে গোল চত্বর পর্যন্ত আঁকা আলপনায় ফুটে ওঠে বৈশাখের রঙ ও রূপ, যা পুরো ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে এক নান্দনিক আবহ।