জুন ১, ২০২৫

রবিবার ১ জুন, ২০২৫

হালদায় ডিম ছাড়লো মা মাছ, সংগ্রহে ব্যস্ত জেলেরা

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ।

বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাত আড়াইটা থেকে হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা অংশে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত ডিম সংগ্রহের উৎসব। শত শত নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা এখন ডিম আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ প্রজাতির মা মাছ নদীর তিন থেকে চার স্থানে ডিম ছাড়া শুরু করেছে। ড. কিবরিয়া বর্তমানে নিজেও নদীতে অবস্থান করছেন।

অধ্যাপক কিবরিয়া বলেন, “মৌসুমের অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় বজ্রসহ বৃষ্টি হলে নদীতে ঢল নামে। তখন মা মাছ ডিম ছাড়ে। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় ডিম ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”

এই বিশেষ সময়টিকে ঘিরে নদীর দুই তীরে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছেন নদীর পাড়ে, আর শত শত নৌকায় বসে ডিম সংগ্রহকারীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী কাজে মগ্ন। নদীর পানি থেকে সরাসরি আহরিত এই ডিম ভবিষ্যৎ মাছ চাষের জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী ও ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, “রাত ৪টা থেকেই আমরা নৌকায় বসে ডিম সংগ্রহ শুরু করেছি। হালদার মা মাছ এবারও প্রচুর ডিম দিয়েছে। এ সময়টায় সবাই এক ধরনের উৎসবের আমেজে থাকেন।”

উল্লেখ্য, প্রচুর বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের সময়ই হালদা নদীতে মা মাছেরা পুরোদমে ডিম ছাড়ে। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরু থেকেই পূর্ণ প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় নদীতে মা মাছের আনাগোনা বাড়ছিল, এবং ডিম সংগ্রহকারীরাও প্রস্তুত ছিলেন। রেণু পোনার জন্য হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার চারটি সরকারি হ্যাচারি এবং শতাধিক মাটির কুয়া সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্থানীয় উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করে রেখেছেন।

স্থানীয়দের কাছে হালদার এই ডিম সংগ্রহ উৎসব কেবল একটি প্রজনন প্রক্রিয়া নয়, এটি তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিবছর প্রাকৃতিকভাবে এই ডিম থেকে নতুন মাছের জন্ম হয়, যা দেশীয় মাছের উৎপাদন ও বৈচিত্র্য বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই নদী রক্ষায় তারা নিজেরাও সর্বদা সতর্ক ও সচেতন থাকেন।

গবেষকদের মতে, হালদা নদী বিশ্বের অন্যতম অনন্য জোয়ারভাটা অঞ্চল যেখানে প্রাকৃতিক উপায়ে দেশীয় মাছের প্রজনন ঘটে। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রাকৃতিক মৎস্যবিজ্ঞানে এক দুর্লভ সম্পদ। প্রতিবছরের মতো এবারও নদী সংরক্ষণে স্থানীয়রা নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। ডিম ছাড়ার এই সময়টিতে নদীতে জলদূষণ ও অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নদীর জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষায় আরও সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি।

আরও পড়ুন