ফ্যাশন সচেতন নারীদের কাছে 'হাই হিল' কেবল একটি জুতো নয়, এটি যেন আত্মবিশ্বাস, স্মার্টনেস আর সৌন্দর্যের প্রতীক। বিশেষ করে পার্টি, কর্পোরেট অফিস কিংবা উৎসবের সাজে হাই হিলকে অপরিহার্য অনুষঙ্গ মনে করেন অনেকেই।
কিন্তু সম্প্রতি ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের একটি চাঞ্চল্যকর গবেষণা এই জনপ্রিয় ফ্যাশন স্টেটমেন্টের উল্টো দিকটি তুলে ধরেছে—যা বলছে, গ্ল্যামারের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক যন্ত্রণা!
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হাই হিল পরার অভ্যাস শুধু পায়ের ক্ষতি করছে না, এর প্রভাব ফেলছে পুরো শরীরের ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন:
হাঁটার গতি হ্রাস ও ভারসাম্যের অভাব: উঁচু হিল পরলে নারীদের স্বাভাবিক হাঁটার গতি কমে যায় এবং শরীরের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।
অতিরিক্ত চাপ: এটি হাঁটু ও মেরুদণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘ সময় এই চাপ বহন করায় শারীরিক অস্বস্তি বাড়ে।
গবেষণা অনুযায়ী, এই ফ্যাশনের কারণে তৈরি হওয়া দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ব্যথা থেকে ধীরে ধীরে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস তৈরি হয়, যা উদ্বেগ, খিটখিটে মেজাজ এবং এমনকি অবসাদের দিকেও নিয়ে যেতে পারে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসব নারী প্রতিদিন হাই হিল পরেন, তারা ফ্ল্যাট জুতো পরা নারীদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি পিঠের ব্যথা ও মানসিক চাপের শিকার হন।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, যখন শরীরে দীর্ঘসময় ধরে ব্যথা থাকে, তখন শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই হরমোনের আধিক্যই উদ্বেগ, মেজাজের পরিবর্তন ও শারীরিক অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলে।
বিশেষজ্ঞের মতে, সাধারণত, আরামদায়ক ও পছন্দনীয় পোশাক আমাদের মস্তিষ্কে 'ডোপামিন' নিঃসরণ বাড়িয়ে ইতিবাচক উদ্দীপনা তৈরি করে। কিন্তু হাই হিলের কারণে যখন শরীরে ব্যথা বা চাপ তৈরি হয়, তখন সেই 'ইতিবাচক অনুভূতি' উল্টে গিয়ে নেতিবাচক সংকেতে পরিণত হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
তাহলে কি হাই হিল পরা পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে?
গবেষকরা বলছেন, একদমই নয়। সামান্য কিছু সচেতনতা মেনে চললেই শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। ফ্যাশন ও স্বাস্থ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে মেনে চলতে পারেন এই টিপসগুলো:
সঠিক হিল নির্বাচন: হিলের উচ্চতা ও আকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকন ও অতি-উঁচু হিলের বদলে চওড়া ও তুলনামূলক ছোট হিল বেছে নিন। এতে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হয় এবং পায়ের ওপর চাপ কম পড়ে।
ব্যবহারের সময়সীমা: প্রতিদিন দীর্ঘসময় হিল পরার অভ্যাস বাদ দিন। এটি শুধুমাত্র বিশেষ অনুষ্ঠান, গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পরুন। বাকি সময় আরামদায়ক জুতো ব্যবহার করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম: পায়ের পেশি নমনীয় রাখতে নিয়মিত কিছু স্ট্রেচিং ও পায়ের ব্যায়াম করুন। এতে ব্যথা ও চাপে স্বস্তি পাওয়া যায় এবং পেশির সহনশীলতা বাড়ে।
মনে রাখতে হবে, সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে হাই হিল যেমন আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট হতে পারে, তেমনি অসাবধানতা ডেকে আনতে পারে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই ফ্যাশনের দুনিয়ায় পা রাখার আগে স্বাস্থ্যের দিকটিও বিবেচনা করা জরুরি।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC