বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা এক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের শিক্ষার তৃষ্ণা নিবারণের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় "চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ", যা আজ কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এক সম্ভাবনার নাম, এক গর্বের বাতিঘর।
চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে স্থাপিত প্রথম সরকারি কলেজ।
এই কলেজটি বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর ভূমিকাকে কেবল স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না; এটি পুরো কুমিল্লা জেলার উচ্চশিক্ষার বিকাশে এক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।
শুরুতে কলেজটি কিছু সীমিত অবকাঠামো ও শিক্ষক-সংকটে পথচলা শুরু করলেও অল্প সময়েই এটি দক্ষিণ কুমিল্লা অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি "লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ" তার বিশেষ ক্ষমতাবলে এটি জাতীয়করণ করার ঘোষণা দেন।
১৯৮৭ সালে কলেজটি সরকারিকরণের আওতায় আসার পরে এর উন্নয়ন এক যুগান্তকারী ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। সরকারিকরণের ফলে প্রশাসনিক কাঠামো, শিক্ষক-নিয়োগ, শিক্ষার গুণগত মান, ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে নতুন গতিশীলতা দেখা দেয়।
বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করা হয়, এবং কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত। কলেজটিতে বর্তমানে বিজ্ঞান শাখা, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় পাঠদান করা হয়।
এছাড়াও একজন শিক্ষার্থী তার উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা শেষ করে সঠিকভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির নিয়ম-কানুনসমূহ অনুসরণ করে ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত হয়ে তার শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।
উপজেলা সদর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিতে নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে পাঠদান করা হয়ে থাকে। আশেপাশের জায়গাসহ কলেজটি বর্তমানে প্রায় ৩ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠানটির প্রাকৃতিক পরিবেশ এটিকে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা করেছে।
বিদ্যায়তনিক পরিসরে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য। কলেজ ক্যাম্পাসটির উত্তরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, উত্তর-পূর্বে পৌরসভা কার্যালয়, দক্ষিণে সার্কেল অফিসার ও সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পশ্চিমে (সরকারি এইচ.জে পাইলট হাই স্কুল) এবং পূর্বে (উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র) দ্বারা পরিবেষ্টিত। কলেজটির শ্যামল-সুন্দর পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।
কলেজটির মূল ফটক থেকে সোজা বরাবর কিছুটা দূরে মূল শিক্ষা ভবনের ঠিক সামনেই কলেজের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অবস্থিত, যেটি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে। শহীদ মিনার থেকে কিছুটা উত্তর দিকেই কলেজের মূল কেন্দ্র বা প্রশাসনিক ভবন।
এর ঠিক পূর্বে মূল ফটকের পাশেই কলেজের কেন্দ্রীয় মসজিদের অবস্থান। কলেজটিতে বর্তমান অধ্যক্ষ "প্রফেসর শিব প্রসাদ দাস গুপ্ত" এর নির্দেশনায় ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে কয়েকটি সেবামূলক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে।
শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই কলেজটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষকবৃন্দ, নিয়মিত পাঠদান, নিয়মিত পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ; সব মিলিয়ে একটি সুশৃঙ্খল একাডেমিক পরিবেশ গড়ে উঠেছে কলেজে।
এখানে শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয় না; তাদের সহশিক্ষা কার্যক্রমেও উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিতর্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া, রোভার স্কাউট, বিএনসিসি; এই সকল কর্মকাণ্ডে কলেজটি ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি ও সৃজনশীলতা গড়ে ওঠে।
অবকাঠামোগত দিক দিয়েও চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ অনেকদূর এগিয়েছে। কলেজের নিজস্ব ক্যাম্পাসে রয়েছে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, বিজ্ঞানাগার, গ্রন্থাগার ও প্রশাসনিক ভবন ও বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে খেলার মাঠ।
কলেজ ক্যাম্পাসে একটি ছায়াঘেরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে, যা পাঠদানের জন্য এক আদর্শ আবহ সৃষ্টি করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কলেজে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা কার্যক্রমও ধীরে ধীরে চালু করা হচ্ছে এবং বিস্তৃত পরিসরে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান প্রশাসনের।
এই কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে থাকে। অনেকেই পরবর্তীতে দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, সাংবাদিকতা, আইন ও বিভিন্ন পেশায় সুনাম অর্জন করছে।
কলেজটির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকে এখন দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন, যা এই কলেজের জন্য এক গৌরবের বিষয়।
চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কেন্দ্র। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে জাতীয় ও স্থানীয় দিবস পালন করে, যা তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটায়। একইসাথে কলেজটি স্থানীয় জনগণের সাথেও নিবিড়ভাবে যুক্ত, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে।
এইভাবে, চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ আজ কুমিল্লা জেলার শিক্ষার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করছে। এর উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ভবিষ্যতে এটি কেবল একটি সাধারণ কলেজ নয়, বরং ভবিষ্যতে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।
একটি শিক্ষিত, দক্ষ ও মানবিক প্রজন্ম গঠনের যে অঙ্গীকার কলেজটি ধারণ করে রয়েছে, তা নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় অগ্রযাত্রায় এক দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করবে।
সর্বশেষ যে বিষয়টির কথা না বললেই নয়, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এ কলেজটি প্রতিবছর শতভাগ পাশের হার সহ ভালো ফলাফলের জন্য অনেক সুপরিচিত। স্বনামধন্য এ কলেজের প্রাক্তন অনেক শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে দেশের জন্য অনেক সুনাম বয়ে এনেছে , যা এখনো চলমান।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যুগ যুগ ধরে সঠিক মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করে দেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে যাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC