মে ২৪, ২০২৫

শনিবার ২৪ মে, ২০২৫

স্বার্থের সমীকরণে জনস্বার্থের বিসর্জন: ত্রিমুখী আঁতাতে বাড়ছে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম

স্বার্থের সমীকরণে জনস্বার্থের বিসর্জন: ত্রিমুখী আঁতাতে বাড়ছে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম
স্বার্থের সমীকরণে জনস্বার্থের বিসর্জন: ত্রিমুখী আঁতাতে বাড়ছে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম/প্রতীকি ছবি/এআই জেনারেটেড/রাইজিং কুমিল্লা

আমাদের সমাজ এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী মহল এবং সাধারণ জনগণ—সকলেই যেন নিজ নিজ ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে বৃহত্তর জনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। এক হতাশাজনক পরিস্থিতিতে, ক্ষমতা আর লাভের এক অশুভ আঁতাতে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ।

দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই জনগণের একাংশও নিজেদের খোলস পাল্টে ফেলে। ক্ষমতায় আসা দলের স্তুতিতে মুখর হয়ে ওঠে তারা, যেন নব্য শাসকদের কৃপালাভই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।

অন্যদিকে, সদ্য ক্ষমতাচ্যুতদের প্রতি বর্ষিত হয় তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা। এই প্রবণতার মূলে রয়েছে একটিই লক্ষ্য—শাসকগোষ্ঠীর আনুকূল্যে অবৈধ সুবিধা আদায়, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে পারস্পরিক লাভ নিশ্চিত করা।

ব্যবসায়ীরাও এই সমীকরণে পিছিয়ে নেই। বাজারের সুস্থ প্রতিযোগিতাকে উপেক্ষা করে তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে।

এর মাধ্যমে তারা সরকারি প্রকল্পের টেন্ডার লাভ, লাইসেন্স ও পারমিট বাগিয়ে নেওয়া, কর ছাড় আদায় এবং নিজেদের ব্যবসার অনুকূলে নীতি প্রণয়নে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পায়। বিনিময়ে রাজনৈতিক দলগুলো পায় নির্বাচনী তহবিল এবং অন্যান্য সুবিধা।

অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের একাংশও এই সুযোগসন্ধানী খেলায় গা ভাসায়। ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে তারা ছোটখাটো ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের আশায় থাকে—যেমন সরকারি চাকরি, বদলি অথবা অন্য কোনো বিশেষ সুপারিশ। এই পারস্পরিক স্বার্থের টানাপড়েনে ধামাচাপা পড়ে যায় ন্যায়নীতি ও জনকল্যাণ

এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা আধুনিক “ক্রোনি ক্যাপিটালিজম”-এরই একটি অংশ, যেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও ব্যবসায়িক স্বার্থের এক অস্বচ্ছ যোগসাজশে একটি বিশেষ গোষ্ঠী লাভবান হয়, আর বঞ্চিত হয় বৃহত্তর জনসাধারণ।

এই ব্যবস্থা কেবল অর্থনৈতিক বৈষম্যই বাড়ায় না, বরং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তিও দুর্বল করে দেয়। আইনের শাসন ভেঙে পড়ে, দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয় এবং জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয় হতাশা ও অবিশ্বাস৷

এই পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন সম্মিলিত সচেতনতা ও পদক্ষেপ। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আইনের শাসনের দৃঢ় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এই স্বার্থান্বেষী আঁতাত ভেঙে জনস্বার্থকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

নতুবা, ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত লাভের এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা আমাদের সমাজকে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।

 

মোঃ আল-আমিন
ব্যাংকার, এমবিএ (হিসাব বিজ্ঞান)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন