
দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব অপরিসীম, এবং দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলা করতে এই প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত কয়েক বছরে সৌদি আরব ছিল রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষস্থানীয় দেশ, তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে কিছুটা পতন দেখা গেছে। এই সময়ে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বেশ কয়েকটি দেশের মাধ্যমে আসলেও, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসীরা ৪৯ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন, যা দেশের মোট রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই প্রবাহ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এবং দেশের অর্থনীতিতে এটি এক ধরণের নতুন সঞ্চালনা সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহের এই বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সহায়ক হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আরব আমিরাত, যেখান থেকে ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। সৌদি আরব, যেখান থেকে অতীতে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসত, বর্তমানে তৃতীয় স্থানে রয়েছে, তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। এছাড়া, অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, ইতালি, কাতার এবং সিঙ্গাপুর থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে।
বিশ্বব্যাপী প্রবাসী আয় পাঠানোর ব্যবস্থার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে, এবং বর্তমান সময়ে বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও মানিগ্রাম, ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে একটি সমন্বিত পদ্ধতিতে তা প্রেরণ করছে। এতে রেমিট্যান্স প্রেরণের প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত হয়েছে, এবং অধিকাংশ প্রবাসী তাদের অর্থ পাঠানোর জন্য এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। ফলে, দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে নতুন এক গতি এসেছে।
ফেব্রুয়ারিতে, ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, যা গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, এবং ফেব্রুয়ারিতে তা আরও বাড়ে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।
দেশের শ্রমবাজার এখন আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এবং দেশটি এখনও বিশ্বের ১৬৮টি দেশে জনশক্তি রফতানি করে। বিশেষভাবে মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে সৌদি আরব, বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের প্রধান গন্তব্য। ২০২৪ সালে, সৌদি আরবের প্রতি ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৪ জন কর্মী গেছেন, যা দেশের মোট শ্রমবাজারের ৬২ শতাংশ। বিশেষভাবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সৌদি আরবে সর্বাধিক বাংলাদেশি কর্মী গেছেন, যা ৮৬ হাজার ৮৬৬ জন।
এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে নারীরা বিভিন্ন দেশেও কাজের জন্য যাচ্ছেন, বিশেষ করে সৌদি আরব, জর্ডান এবং কুয়েতে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, ৪ হাজার ৪৭৭ জন নারী সৌদি আরবে কাজ করতে গেছেন।