অবশেষে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ মুক্ত হয়েছে। জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকই সুস্থ রয়েছেন।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাত ৩টা ৩০ মিনিটে কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি।
পরে দস্যুরা মুক্তিপণের জন্য জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ঈদের আগেই জাহাজটির মালিকপক্ষ নানা পর্যায়ে দরকষাকষির পর দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আভাস দিয়েছিল।
জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দাবি করছেন, আন্তর্জাতিক চাপে আলোচনার মাধ্যমে কোনো ধরনের পণ ছাড়াই মুক্ত হয়েছেন নাবিকরা।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রথম বিবেচনা ছিল নাবিকদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনা। এটা আমাদের সাফল্য। এর আগে এত অল্প সময়ে উদ্ধারের কোনো নজির নেই।’
পয়লা বৈশাখের দিনে নাবিকদের উদ্ধার হওয়া আনন্দের উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে এমন একটা সংবাদ আমাদের উৎসবকে আরও রাঙিয়েছে।’
মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন,’টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যেগুলো শোনা যাচ্ছে এগুলো ঠিক না। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ওপর চাপ ছিল। তারা আন্তরিকতার সঙ্গে তৎপরতা করেছে। আন্তর্জাতিক চাপেই আলোচনার মাধ্যমে মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্ত হয়েছে নাবিকরা।’
বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ৩০ মিনিটে নাবিকদের উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
৩১ দিন পর জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া নাবিকদের দেশে ফিরতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
এসময় শিপিং করপোরেশনের মহাপরিচালক জানান, জাহাজ আরব আমিরাতে কয়লা খালাস করবে। এতে ছয় দিন সময় লাগবে।
অন্যদিকে সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম পান্টল্যান্ড মিররের খবরে বলা হয়েছে, লেনদেন হওয়া মুক্তিপণের পরিমাণ পাঁচ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা।
১৪ বছর আগে একই মালিকের এমভি জাহান মনি নামের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। তখনও তারা মুক্তিপণের অংক গোপন রাখে। এটি একটি কৌশল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।