
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ইতিহাসে প্রথম আবাসিক ভবন ‘ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হল’— একসময় ছিল শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন, রাজনীতি ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নে ২০০৬ সালে নির্মিত এই হলটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রীনিবাস। কিন্তু উনিশ বছর পেরিয়ে আজ সেই গৌরবময় ভবনটি পরিণত হয়েছে অবহেলার প্রতীকে।
চার শতাধিক শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা দিলেও হলের চারপাশে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা, ভাঙা বাথরুম, খেলার মাঠের অভাব এবং নিরাপত্তাহীন পরিবেশ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহেদুল ইসলাম বলেন,“আমাদের হল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হল হওয়া সত্ত্বেও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। হলে চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও খেলার মাঠ নেই। নেই কোনো লাইব্রেরি, রিডিং রুমেও নেই বইয়ের অস্তিত্ব।”
ওশেনোগ্রাফি বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জিহাদুল ইসলাম রাফি বলেন,“দীর্ঘ ১৯ বছরেও আমাদের সালাম হলের কোনো সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়নি, যার ফলে হলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। চারপাশে জমে থাকা মাটি ও ময়লার স্তূপ দেখে মনে হয় ভবনগুলো যেন পরিত্যক্ত। ড্রেনের পানি জমে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।”
নোবিপ্রবির ইএসডিএম বিভাগের শিক্ষার্থী সৈকত বলেন, “প্রশাসন পরিবর্তন হলেও আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান হয় না। ইন্ডোর গেমরুমে নেই কোনো যন্ত্রপাতি, আর হলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে রয়েছে বড় ঘাটতি।”
এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রভোস্ট মো. ফরিদ দেওয়ান বলেন,“অভিযোগগুলো সত্য। হলে রুমের সংকুলান করা গেলে দ্রুতই ইন্ডোর গেমস রুমের ব্যবস্থা করা হবে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্যোগ নেবে বলে জেনেছি। প্রাচীর তৈরি হলে ময়লার স্তূপ পরিষ্কার করে খেলার মাঠ ও বাগান করার পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের।”
তিনি আরও বলেন,“প্রশাসনের বরাদ্দকৃত লাইব্রেরির টাকা হাতে পেলেই শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী বই ও আসবাবপত্র কিনে রিডিং রুমে রাখা হবে।”
‘প্রশাসন আসে, প্রশাসন যায়; কিন্তু শিক্ষার্থীদের সমস্যা থেকেই যায়’এমন মন্তব্যের জবাবে প্রভোস্ট ফরিদ দেওয়ান বলেন,
“বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অত্যন্ত উদ্যমী। ভিসি মহোদয় ও প্রোভিসি মহোদয় কয়েক দফা এই হল পরিদর্শন করেছেন। তাঁদের সহযোগিতায় আমরা অবশ্যই হলের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারব বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।”
নোবিপ্রবির ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হল একসময় ছিল শিক্ষার্থীদের প্রাণকেন্দ্র। আজও সেই প্রাণ টিকে আছে, তবে তা ধুলোয় ঢাকা। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা— জুলাই-পরবর্তী প্রশাসনের উদ্যোগে হলটি ফিরে পাক তার হারানো গৌরব, যেন তারা আবার গর্বভরে বলতে পারে,“আমি আব্দুস সালাম হলের ছাত্র।”
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC