
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ত্রাস হিসেবে পরিচিত চাঁন মিয়া ওরফে চাঁন্দা ডাকাতকে (৩৮) অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। গ্রেপ্তারের সময় তার হেফাজত থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ১ রাউন্ড গুলি এবং ১টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
দীর্ঘ প্রায় পনের মাস ধরে অস্ত্রধারী চাঁন্দা ডাকাতের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা জিম্মি হয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তার বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আলোচনায় আসে। তার ভয়ে বহু মানুষ এলাকাছাড়া হয়েছিল এবং তার রাজনৈতিক সংযোগের কারণে পুলিশও তাকে ভয় পেত। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলা নিতে পুলিশের মধ্যে ব্যাপক অনীহা ছিল বলেও জানা যায়।
গ্রেপ্তার হওয়া চাঁন্দা ডাকাত উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চর আলাউদ্দিন গ্রামের মোজাম সর্দার বাড়ির আব্দুল বাতেনের ছেলে। তিনি মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দিদারের ভাই।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে র্যাব-১১, সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ও সহকারী পুলিশ সুপার মিঠুন কুমার কুণ্ডু গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আলআমিন বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-১১ জানিয়েছে, চাঁন্দা ডাকাত এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে নিরীহ এলাকাবাসীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জুলুম, নির্যাতন ও চাঁদাবাজি করে আসছিল। অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করার উদ্দেশ্যে সে আগ্নেয়াস্ত্র তার হেফাজতে রেখেছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ত্রিমুখী সন্ত্রাসের শিকার মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ৫ আগস্টের পর চাঁন্দা ডাকাত মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে নির্বিচারে চাঁদাবাজি, খামারের গরু, মহিষ, মাছ লুঠ করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। একইসাথে এই ইউনিয়ন মাদক কারবারিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। এক সময়ের শান্তির জনপদ মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন এখন অশান্তি ও সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছে। মাদক ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে স্থানীয় বাসিন্দারা ভীত সন্ত্রস্ত।
৫ আগস্টের পর মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে চাঁন্দা ডাকাত বাহিনী, ফারুক বাহিনী এবং মাদককারবারি তোতলা বাহিনীর আবির্ভাব হয়। এর মধ্যে চাঁন্দা ডাকাত বাহিনী ও ফারুক বাহিনী চালাচ্ছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা তোতলা বাহিনী জমজমাট মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে। অনেকে এসব জেনেও না জানার ভান করায় মোহাম্মাদপুর ইউনিয়নের ৩০ হাজার বাসিন্দা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ বাহিনীগুলোর মধ্যে চাঁন্দা ডাকাত ও ফারুক বাহিনীর কাজ হলো স্থানীয় লোকজনের খামার থেকে গরু, মহিষ ও মাছ লুঠ করে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া। আর তোতলা বাহিনীর কাজ হলো চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা সংলগ্ন নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার উড়িরচর থেকে নদীপথে মাদকের চালান মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ঘাট দিয়ে এনে সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন, সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা।
মোহাম্মাদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন জানান, চাঁন্দা ডাকাত ও কালাম মাঝির ভাই মো. ফারুক মাঝি মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার ভাইদের খামার থেকে ২০টি মহিষ, ২৬টি গরু ও বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে কোটি টাকার মাছ ও ক্ষেতের ধান লুট করে নিয়ে গেছে। খামারের লোকজন অস্ত্রের ও প্রাণের ভয়ে বাঁধা দিতে পারেননি।
র্যাব হেফাজতে থাকায় অভিযুক্ত চাঁন্দা ডাকাতের কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও চাঁন্দা ডাকাতের ভাই মো. দিদার বলেন, “আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি চুরির অভিযোগও নেই। ষড়যন্ত্র করে আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ইউনিয়নে কোনো বাহিনী নেই।”
র্যাব-১১, সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ও সহকারী পুলিশ সুপার মিঠুন কুমার কুণ্ডু আরও জানান, গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে চরজব্বর ও হাতিয়া থানায় হত্যার চেষ্টাসহ অন্যান্য মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামি ও উদ্ধারকৃত অস্ত্র-গুলির বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।










