
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাত সপ্তম দিনে গড়িয়েছে। এই সাত দিনে উভয় দেশ থেকেই পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষই ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায় ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে এক তরুণী ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে আবেগভরা কণ্ঠে জানাচ্ছেন এই ধ্বংসস্তূপই ছিল তার একসময়ের ঘর।
ভিডিওটির ওপর ডিজিটালভাবে একটি ইসরায়েলি পতাকা সংযোজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভিডিওর তরুণীকে একজন ইসরায়েলি নাগরিক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে—এই দাবিটি ভুল ও বিভ্রান্তিকর। ভিডিওতে দেখা যাওয়া তরুণী আসলে ইসরায়েলি নন, বরং সিরিয়ার শরণার্থী।
ভিডিওটি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তরুণীটির বক্তব্যের শুরুতেই তিনি উচ্চারণ করেন “দামেস্কাস” শব্দটি। দামেস্কাস বা দামেস্ক হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র সিরিয়ার রাজধানী। এটি ইসরায়েলের কোনো শহর নয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চ চালিয়ে ফ্যাক্টওয়াচ খুঁজে পায়, ভিডিওটি ইউসরা মারদিনি (Yusra Mardini) নামের একজন সিরিয়ান শরণার্থীর ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে। এই ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ভিডিওটি পোস্ট করা হয় ১৪ মার্চ ২০২৫ তারিখে।
তার পোস্ট এবং ভিডিওর বক্তব্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়—এই ভিডিও ইসরায়েল নয়, সিরিয়ার দামেস্কে ধারণ করা, এবং এতে থাকা তরুণী সিরিয়ান নাগরিক।
পরবর্তীতে ইউসরার পরিচয় যাচাই করতে গিয়ে তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা UNHCR-এর ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করা হয়।
তথ্য অনুযায়ী ইউসরা মারদিনি ১৯৯৮ সালের ৫ মার্চ সিরিয়ার দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালে তিনি ও তার বোন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেন। তিনি ২০১৬ সালের অলিম্পিকে Refugee Olympic Team-এর সদস্য হিসেবে অংশ নেন। ২০১৭ সালে ইউএনএইচসিআর তাকে শুভেচ্ছাদূত (Goodwill Ambassador) হিসেবে মনোনীত করে।
এই সকল তথ্যই প্রমাণ করে ভিডিওতে থাকা তরুণী একজন সিরিয়ান শরণার্থী। তিনি ইসরায়েলের নাগরিক নন, বরং সিরিয়ার একজন যুদ্ধ-আক্রান্ত বাসিন্দা, যিনি তার ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের আবেগ প্রকাশ করেছেন।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিকে ইসরায়েলি প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বাস্তবতাটা ভিন্ন। তরুণীর প্রকৃত পরিচয়, ভিডিওর উৎস ও অবস্থান বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে ভিডিওটি সিরিয়ার, এবং এতে থাকা ব্যক্তিও সিরিয়ান।
ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।