এপ্রিল ১৯, ২০২৫

শনিবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

সারাদেশে ১ মে থেকে ডিম-মুরগির খামার বন্ধের ঘোষণা

Rising Cumilla - Chicken-Egg
প্রতীকি ছবি/সংগৃহীত

ডিম ও মুরগি উৎপাদনে লোকসানের মুখে পড়েছেন প্রান্তিক খামারিরা। গত দুই মাসে প্রায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা ক্ষতির শিকার হয়ে আগামী পহেলা মে থেকে সারাদেশে খামার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার।

বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেন, রমজান ও ঈদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়েও প্রান্তিক খামারিরা বিপুল লোকসান গুনেছেন। প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ কেজি মুরগি উৎপাদনে প্রতি কেজিতে তাদের ৩০ টাকা করে ক্ষতি হয়েছে। এতে এক মাসে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, দৈনিক উৎপাদিত ৪ কোটি ডিমের মধ্যে প্রান্তিক খামারিরা ৩ কোটি ডিম উৎপাদন করেন। প্রতি ডিমে ২ টাকা লোকসান হওয়ায় গত দুই মাসে শুধু ডিমেই তাদের ক্ষতি হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা।

সভাপতি সুমন হাওলাদার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “মোট দুই মাসে ডিম ও মুরগির খাতে প্রান্তিক খামারিদের লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নীরবতা হতাশাজনক। মনে হচ্ছে কিছু কর্পোরেট কোম্পানি পুরো পোল্ট্রি শিল্প দখলের ষড়যন্ত্রে নেমেছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, কর্পোরেট গোষ্ঠী শুধু ফিড, বাচ্চা ও ওষুধ নয়, ডিম ও মুরগির বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রান্তিক খামারিদের ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’-এর দাসত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

“আমরা কর্পোরেট দাসত্ব মানব না। আগামী পয়লা মে থেকে সারাদেশে প্রান্তিক খামারিরা খামার বন্ধ রাখবেন। সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে, বলে জানান বিপিএ সভাপতি।

কারচুপির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ঈদের আগে যে বাচ্চা ২৮-৩০ টাকায় উৎপাদিত হয়েছে, কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করেছে। অথচ এখন সেই বাচ্চাই ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ যেখানে ১৬০-১৭০ টাকা, সেখানে কর্পোরেটরা বাজারে বিক্রি করছে ১২০-১২৫ টাকায়। একই চিত্র ডিমের ক্ষেত্রেও। উৎপাদন খরচ ১০-১০.৫০ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮-৮.৫০ টাকায়। বাজার সম্পূর্ণরূপে কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণে এবং তারাই দাম নির্ধারণ করে প্রান্তিক খামারিদের লোকসানের মুখে ফেলছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো:

১. পোল্ট্রি পণ্যের জন্য জাতীয় মূল্যনিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ও নির্ধারণ কমিটি গঠন। ২. কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন করে এটি নিষিদ্ধ করা। 3. পোল্ট্রি বাজার রেগুলেটরি অথরিটি গঠন। ৪. ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য সরকারের পুনর্বাসন প্যাকেজ। ৫. খামারিদের রেজিস্ট্রেশন ও আইডি কার্ড প্রদান। ৬. কোম্পানিকে কেবল কাঁচামাল উৎপাদনে সীমাবদ্ধ রাখা। ৭. কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও কোম্পানির খামার নিষিদ্ধ করা। ৮. কেজি ভিত্তিক ডিম ও মুরগি বিক্রির নীতিমালা প্রণয়ন। ৯. ডিম-মুরগির রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ। ১০. পূর্ণাঙ্গ ‘পোল্ট্রি উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন।

বিপিএ সভাপতি স্পষ্ট ভাষায় জানান, এসব দাবি মানা না হলে প্রান্তিক খামারিরা তাদের কঠোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।