বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হলো। গণভবনে ভার্চুয়ালি এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন।
বয়স্ক নাগরিকদের একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে দেশে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা (স্কিম) চালু করল সরকার।
এর ফলে এখন থেকে দেশে-বিদেশে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ এই কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন। সরকারের সর্বজনীন কর্মসূচিতে ১৮ বছর বয়সে যুক্ত হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা মিলবে। যুক্ত হতে বয়স যত বাড়বে, আনুপাতিক হারে কমতে থাকবে সুবিধাও। এভাবে যে কেউ তাঁর মোট চাঁদার (কিস্তি) চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ টাকা পেনশন পাবেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
প্রাথমিকভাবে ৪ ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালু হলো। সেগুলো হলো-প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের গত রোববার জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী, এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন গ্রাহক। চাঁদা পরিশোধের পর তিনি মারা গেলে তাঁর নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন ১৫ বছর।
বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাসী’ এবং দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসূচি হচ্ছে ‘সমতা’। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক এই পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবেন। আর ৬০ বছর বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন তারা।
ইতোমধ্যে পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট চালু হয়েছে ‘ইউপেনশন’। এতে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, পেনশনের চাঁদা জমা দিতে হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে। আর জমা দেওয়া যাবে অনলাইন ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান এবং তফসিলি ব্যাংকের যে কোনো শাখার মাধ্যমে।
প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তারা পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধিত হতে পারবেন। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিও পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় তারা যে সুবিধা ভোগ করে থাকেন, তা তাদের বাদ দিতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।