জানুয়ারি ১৫, ২০২৫

বুধবার ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

সরাইল বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: তৃণমূলের ক্ষোভ, সমাধানের দাবি

সরাইল বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: তৃণমূলের ক্ষোভ, সমাধানের দাবি
সরাইল বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: তৃণমূলের ক্ষোভ, সমাধানের দাবি। ছবি: প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা বিএনপির সদ্য প্রকাশিত ১০১ সদস্যের কমিটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা এই কমিটিকে ‘অন্যায্য’ এবং ‘অপেশাদার’ বলে আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা শুরু করেছেন। এর ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ।

প্রায় চার মাস আগে আনিছুল ইসলাম ঠাকুরকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপুকে সাধারণ সম্পাদক করে সরাইল উপজেলা বিএনপির কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা বিএনপি। তবে কমিটির তালিকা এতদিন গোপন রাখা হয়। সম্প্রতি এটি জনসমক্ষে প্রকাশিত হলে সরাইল বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মাস্টারের সমর্থকরা এই কমিটির বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। তারা অভিযোগ করেন, কমিটিতে ত্যাগী কর্মীদের জায়গা না দিয়ে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে।

অনেকেই দাবি করেছেন, কমিটির একটি বড় অংশ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আত্মীয়স্বজন এবং যারা গতদিনে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন না।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) আনোয়ার হোসেন মাস্টারের সমর্থকরা সরাইল ভূমি অফিসে উপজেলা সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুরকে দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।

আনোয়ার হোসেন মাস্টারের সমর্থকদের দাবি, এই কমিটি সম্পূর্ণ অন্যায্য এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। তারা অবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটি নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, যদি এই কমিটি বাতিল না করা হয়, তবে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

অন্যদিকে কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলেছেন, এই কমিটি গঠনে যথাযথ নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়েছে। তাদের দাবি, দলের কঠিন সময়ে যারা রাজপথে লড়াই করেছেন, তাদের সমন্বয় করেই এই কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যারা বিরোধিতা করছেন, তারা অতীতে দলের নিয়ম মানেননি এবং অনেকেই বহিষ্কৃত।

সরাইল উপজেলা বরাবরই বিএনপির একটি শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ও বিভ্রান্ত। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই বিরোধ যদি সময়মতো মেটানো না হয়, তবে তা বিএনপির জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, সমস্যার সমাধান না হলে রাজপথের আন্দোলন দুর্বল হবে এবং দলীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে।

স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের এখনই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত। দলীয় অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে প্রয়োজন ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ব্যবস্থা করা।

জনসাধারণের প্রত্যাশা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সঠিক সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেবে এবং সরাইলের রাজনীতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে।