শুক্রবার ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সরাইলে ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে প্রতিবেশীদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ

আতিকুল ইসলাম, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

সরাইলে ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে প্রতিবেশীদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ
সরাইলে ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে প্রতিবেশীদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ/ছবি: প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরহাদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অনুসারীদের দিয়ে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশীদের ওপর হামলা ও বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে শাহবাজপুরের ধীতপুর গ্রামে সরেজমিনে গেলে সাংবাদিকদের এ অভিযোগ করেন স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি পরিবার। এ ঘটনায় পাঁচটি বসতঘর, একটি অটোরিকশার গ্যারেজ ও গরুর খামার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউপি সদস্য ফরহাদ ভূঁইয়ার সঙ্গে তার চাচাতো ভাই স্থানীয় প্রবাসী সুমন ভূঁইয়ার জমি সংক্রান্ত একটি বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকলেও পেশিশক্তির প্রভাবে ফরহাদ মেম্বার তার অনুসারীদের নিয়ে প্রায়ই সুমন ও তার স্বজনদের বাড়িতে হামলা চালান।

আজ (৫ সেপ্টেম্বর) সকালেও ইউপি সদস্যের অনুসারীরা আচমকা হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। এসময় তাদের বাঁধা দিতে গিয়ে আহত হয়েছেন প্রায় ৬ জন। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মোঃ আলমগীর মিয়া বলেন, ’সুমন ও ফরহাদ মেম্বারের মধ্যে জমি নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা চলছে। আমি ন্যায়ের পক্ষে কথা বলি বিধায় ফরহাদ মেম্বারের অনুসারীরা আমার বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় আমি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছি। আমি ন্যায় বিচার চাই।’

এ বিষয়ে প্রবাসী সুমন ভূঁইয়ার ভাই মহন মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই প্রবাসে যাওয়ার সময়ে আমার মামা ইউনুছ মিয়ার কাছ থেকে পারিবারিক একটি জমি বিক্রি করা হয়। শর্ত ছিল তিনি আবার বিক্রি করলে আমাদেরকেই ফেরত দেবেন। পরবর্তীতে আমার ভাইয়ের প্রবাসে ভালো অবস্থান তৈরি হওয়ায় ২,৫০,০০০ (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা) মূল্যে জমিটি কিনে নেওয়ার আলোচনা হয় ও টাকাও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু দুজনেই প্রবাসে থাকার কারণে দুই বছরেও দলিল করা সম্ভব হয়নি। এরই সুযোগে ফরহাদ মেম্বারের সহযোগিতায় তার ভাতিজা জীবন মিয়া এক লক্ষ টাকা বেশি দিয়ে জমিটি কিনে নেয়। জমি কেনার সময়ই তারা বলেছিল ইচ্ছে করেই দরবার কিনেছি। জমি কেনা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রায়ই আমাদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে তারা। আজকের ঘটনায় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং আমরা লিখিত অভিযোগ করেছি।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য ফরহাদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছে তাদের অনেকেই মাদকাসক্ত ও উন্মাদ। সুমন আমারই চাচাতো ভাই। তবে যে জমি নিয়ে বিরোধ সেটি সুমনের মামা ইউনুছ মিয়ার কাছ থেকে ক্রয় করেছে আমার ভাতিজা জীবন। এ ব্যাপারে সুমন আমাকে ভুল বুঝে অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাবে এবং ক্ষমতাবান একজনের মদদে নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত।’

হামলা ও ভাঙচুরের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি শান্তিতে বিশ্বাসী। আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের অর্থের জোরে সে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করছে। আমাকে আওয়ামী লীগ সাজানোর অপচেষ্টা করছে, অথচ আমি শাহবাজপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলাম। গতকাল রাতেও সুমনের অনুসারীরা পুলিশ নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছে। একের পর এক ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছি, কিন্তু গতকাল পুলিশ নিয়ে তারা সরাসরি আসায় আমার পক্ষের লোকদের আর সামলাতে পারিনি। পরবর্তীতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তারাই এখন নিজেদেরটা ভাঙচুর করে আমাদের দোষারোপ করছে।’

এ ব্যাপারে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষের খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন এলাকা শান্ত রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন