সরকার ক্ষমতায় থেকেও যে নির্বাচন সুষ্ঠ হতে পারে সেটি এবার প্রমাণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
আজ রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে যেমন বাগবিতণ্ডা হচ্ছে, সহিংসতাও হয়েছে। এবারের নির্বাচনে যেকোনো মূল্যে আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে- একটি সরকার তার দায়িত্বে থেকে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে।
সিইসি বলেন, ১৬ লাখ লোক ভোটের কাজে নিয়োজিত হবে। এতে আট লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আর আট লাখ থাকবেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচন ইন্টারন্যাশনাল ডাউমেনশন পেয়েছেন। কেন না, আমরা জাতিসঙ্ঘের সদস্য।
সিইসি আরো বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র নির্বাচনকে নিয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার এবং আমাদের সাথে তারা বারবার সাক্ষাৎ করছেন। তাদের প্রত্যাশা তারা ব্যক্ত করেছেন। তারা আশা করেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু করতে হবে। তারা যখন আশা করেন, বুঝতে হবে খুব শক্তভাবেই আশা করেন। তাদের আশা করাটাও অন্যায় নয়। আমরা যেহেতু গ্লোবাল কমিউনিটিতে বসবাস করি এবং গ্লোবাল কমিউনিটির সদস্য।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হতে হবে। সেখানে আপনাদের যে দায়িত্ব সেটি খুব স্পষ্টভাবে বুঝে নেবেন। যে দায়িত্বটা আরোপ করা হবে, সে দায়িত্বটা যদি ভালোভাবে বুঝে নেন, তাহলে দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতা প্রয়োগে অনেক বেশি দক্ষ হবেন। নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচনে ভোটের দিন, ভোটের আগে আচরণবিধি প্রতিপালনে কিছু অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা হয়। যেমন সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে দেয়া, কেন্দ্র দখল হয়ে যাওয়া, এতে ভোটাররা ভোটটাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস গড়ে তুলবে হবে, যে নির্বাচনের পরিবেশ আছে, যে আপনারা নির্ভয়ে ভোটাধিকার দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো: জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো: আনিছুর রহমান এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণায়লের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী।
উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। এরপর সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়। বিএনপির দাবি দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব না।
এর ফলে তারা ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে। পরবর্তীতে নানান নাটকীয়তা ও সংলাপের পর অবশেষে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তবে ওই নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসন পায় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট।
এরপর তারা কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করলেও শেষ পর্যন্ত সংসদে যায়। আর টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তবে এবার আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছে না দলটি।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো।