জুন ২, ২০২৫

সোমবার ২ জুন, ২০২৫

সড়কে অব্যবস্থাপনা ও যানজটে নাকাল কুমিল্লা: নাগরিক জীবনে চরম দুর্ভোগ

Rising Cumilla - Badurtala, Kandirpar, Cumilla
কান্দিরপাড় এর দীর্ঘ যানজটের ছবি | ছবি: হাছিন ইশরাক মিরাজ

কুমিল্লা, দেশের একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর জেলা শহর, বর্তমানে পরিণত হয়েছে যানজট ও সড়ক বিশৃঙ্খলার নগরীতে। দিনদিন শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, গড়ে উঠছে নতুন আবাসিক এলাকা, ব্যবসায়িক স্থাপনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়েনি সড়ক অবকাঠামো, পরিকল্পিত নগরায়ণ কিংবা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। 

এই যানজটের জন্য একাধিক কারণকে দায়ী করা যায়, যেমন : ১. অপ্রশিক্ষিত ও বেপরোয়া অটো-মিশুকচালক ব্যাটারিচালিত রিকশা (অটো) এবং মিশুকের সংখ্যা শহরে নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে।  সেই সাথে অধিকাংশ চালক অপ্রশিক্ষিত এবং ট্রাফিক নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। সংকীর্ণ রাস্তায় রং সাইডে চলা কিংবা ইউটার্ন নেওয়ার প্রবণতা যানজট বাড়িয়ে তোলে।

২. ফুটপাত ও সড়কে অবৈধ দখল, শহরের প্রায় প্রতিটি প্রধান সড়কের ফুটপাত এবং এমনকি একাংশ সড়কজুড়েই গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট, ভ্রাম্যমাণ হকার, ও অবৈধ পার্কিং। এসব স্থাপনা পথচারীদের ফুটপাত ব্যবহার থেকে বঞ্চিত করে এবং যান চলাচলের জায়গা সংকুচিত করে তোলে।

৩. ট্রাফিক পুলিশের ঘাটতি ও দায়িত্বহীনতা; শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও ব্যস্ত সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত। কোথাও কোথাও দিনের অধিকাংশ সময়ই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণহীন থাকে। আবার কোথাও ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তাদের মাঝে দায়িত্বে গাফিলতি লক্ষ্য করা যায়, যার ফলে সড়কে শৃঙ্খলার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।

৪. শহর পরিকল্পনায় দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগের অভাব; সিটি কর্পোরেশন কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো দীর্ঘমেয়াদি বা টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি যা নগরের এসব সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, সেই সাথে নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে প্রসাশনকে রীতিমত নিষ্ক্রিয় দেখা যায়।

নাগরিক জীবনে এসব সমস্যার প্রভাব এই যানজট ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ শুধু সময়ের অপচয় নয়, বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। স্কুলগামী শিশুদের স্কুলে আনা-নেওয়া এখন অভিভাবকদের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। জরুরি সেবা, যেমন অ্যাম্বুলেন্স কিংবা ফায়ার সার্ভিস যানবাহন যানজটের কবলে পড়তে হয়। নারী ও শিশুদের জন্য রাস্তায় চলাচল হয়ে উঠেছে অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। শহরবাসী রীতিমত এতসব অনিয়মের কাছে অসহায়।

কান্দিরপাড় ফুটপাত দখল | ছবি: হাছিন ইশরাক মিরাজ

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নগর প্রশাসন, ট্রাফিক বিভাগ এবং স্থানীয় সরকারের সম্মিলিত ও কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে গ্রহণ করা প্রয়োজন:

১. অটো ও মিশুকের নিয়ন্ত্রণ: অনুমোদিত সংখ্যা নির্ধারণ করে সীমিত লাইসেন্স ইস্যু করা বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ও ড্রাইভিং টেস্ট চালুর মাধ্যমে চালকদের দক্ষতা যাচাই করে চলাচলের অনুমতি দেওয়া

২. অবৈধ দখল উচ্ছেদ: ফুটপাত ও রাস্তা থেকে অবৈধ দোকানপাট ও পার্কিং অপসারণ, মূল সড়ক ওঁ ফুটপাত থেকে হকারদের নির্ধারিত স্থানে স্থানান্তর রাস্তার দু’পাশে হাটাচলার ফুটপাত প্রশস্ত করা এবং অবৈধ পার্কিং রোধ করা

৩. ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন: শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন আধুনিক সিসিটিভি ও ট্রাফিক সিগনাল স্থাপন, দায়িত্বহীন ও দুর্নীতিগ্রস্ত ট্রাফিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ

৪. পরিকল্পিত নগরায়ণ: দীর্ঘমেয়াদি সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেওয়া, ফুটপাত সমূহ প্রশস্ত করা, গণপরিবহন চালু করা এবং শহরকে বিকেন্দ্রীকরণ করা, বাইপাস সড়ক ও ওভারপাস নির্মাণের মাধ্যমে চাপ কমানো ইত্যাদি।

এখনই সময় দৃঢ় সিদ্ধান্ত ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে এই শহরকে সুশৃঙ্খল করে তোলার। তা না হলে ভবিষ্যতে কুমিল্লা শহর পরিণত হবে নাগরিক দুর্ভোগের প্রতিচ্ছবিতে, যা কারও কাম্য নয়। তাই উর্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান—সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে এই সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানে এগিয়ে আসুন। নগরবাসী চায় একটি নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও চলাচলযোগ্য কুমিল্লা।

লেখক- হাছিন ইশরাক মিরাজ , শিক্ষার্থী- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন