সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শবে কদরের নামাজের নিয়ম-নিয়ত ও দোয়া: জানুন কীভাবে রাতটি কাটাবেন

Muslim Prayer
প্রতীকি ছবি/সংগৃহীত

পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে কোনো একটি রাত হলো শবে কদর। হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন এবং বান্দাদের দোয়া কবুল করেন। তাই এই রাতটি যথাযথভাবে কাটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরে যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম করবে, তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হবে। ’ -সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ৭৬০; সহিহ বোখারি: হাদিস নং ২০১৪

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রমজান মাসের আগমন ঘটলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের নিকট এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃতপক্ষে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র (সর্বহারা) দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। ’ -সুনানে ইবনে মাজা: হাদিস নং ১৬৪৪

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

  • তাই প্রতিটি বিজোড় রাতকেই লাইলাতুল কদর ভেবে ইবাদতে মশগুল হয়ে যান ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

এসব রাতে কোন কোন আমল করলে, বান্দা সত্যিকার অর্থে লাইলাতুল কদরের বরকত, রহমত ও ফজিলত পেতে পারে তা জানা জরুরি।

কেউ যদি কদরের রাতে আমল করতে চান, এই নিয়মে করতে পারেন…

শবে কদরের নামাজের নিয়ত:

  • নাওয়াইতু আন্‌ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদ্‌রি নফ্‌লে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।

অর্থ: আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর।

শবে কদরের আমল:

  • এই রাতে রাত জেগে ইবাদত করা উচিত।
  • কুরআন তেলাওয়াত করা।
  • দোয়া ও ইস্তেগফার করা।
  • নফল নামাজ পড়া।
  • সাহরি খাওয়ার আগে আল্লাহর কাছে দোয়া করা।

শবে কদরের রাতে যেভাবে ইবাদত করবেন:

  • রাত দশটার পর থেকে টিভি বা মোবাইল ফোন দেখা থেকে বিরত থাকা।
  • বেশি গরম লাগলে গোসল করুন ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা।
  • রাত ১২ টার আগ পর্যন্ত পবিত্র কুরআন পড়া।
  • বেশি বেশি নফল আর হাজতের নামাজ পড়া।
  • রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত জিকির করা।

শবে কদরের রাতের নামাজের নিয়ম:

  • শবে কদরের রাতে বিশেষ কোনো নামাজের পদ্ধতি নেই।
  • যত রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারেন।
  • দুই রাকাত করে যত সুন্দর করে, যত মনোযোগ সহকারে পড়া যায় ততই ভালো।
শবে কদরের রাতে যে দোয়া বেশি পড়বেন: 

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, শবে কদরের রাতে আমার কোন দোয়াটি পড়া উচিত?’ তিনি তাঁকে পড়ার জন্য নির্দেশ দিলেন-

  • اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’

  • অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

লাইলাতুল কদর সুরা: 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

  • ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কদর। অমা আদরা কামা লাইলাতুল কাদর। লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর। তানাযযালুল মালায়িকাতু অররূহু ফীহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরি। সালামুন হিয়া হাত্তামাত্ব লাই’ল ফাজ্বর।

অর্থ: শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

নিশ্চয় আমি এটা (কুরআন) কদর রাতে নাযিল করলাম। আর আপনি কি জানেন, মহিমান্বিত রাত কি? কদর (মহিমান্বিত) রাত, হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতা ও রূহ (জিবরাঈল) (দুনিয়াতে) অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। সে রাতে সম্পূর্ণ শান্তি, ফজর পর্যন্ত বিরাজিত থাকে।

মনে রাখবেন, শবে কদরের সঠিক রাত কোনটি তা আমাদের জানা নেই। তবে, রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলো (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯) শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোকে সম্মানের সাথে কাটানো উচিত।