যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানল ছয় দিনেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, বরং উল্টো দিক পরিবর্তন করে নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। এছাড়া এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
গত ছয় দিনের দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৪০ হাজার একরেরও বেশি এলাকা। আগুনের গ্রাসে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে ১২ হাজারের বেশি বাড়িঘর ও স্থাপনা। উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে এক লাখেরও বেশি মানুষ।
আজ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, লস অ্যাঞ্জেলেসের পাঁচদিনের ভয়াবহ তাণ্ডবের পরও জ্বলছে আগুন। পালিসেডস, ইটন, কেনেথ, লিডিয়া, হার্স্ট এবং আর্চারের অনেক এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এর মধ্যে প্যালিসেইডসে দাবানল আরও এক হাজার একর এলাকায় ছড়িয়েছে। এ ছাড়া দাবানল নতুন করে মোড় নিয়েছে ব্রিটেন উডস এবং সান ফার্নান্দো ভ্যালির দিকে।
এ বিষয়ে আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনার স্থানীয় সময় রোববার দাবনলের আগুনে ২৪ জন মারা যাওয়ার তালিকা দিয়েছে। এ ছাড়া ১৬ জনের নিখোঁজের কথা জানিয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশি অভিযান শুরু করলে মৃত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ফায়ার সার্ভিস জানায়, বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেসে চারটি দাবানল সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে প্যালিসেইডস দাবানল আরও এক হাজার একর এলাকায় ছড়িয়েছে। আগেই এই দাবানলে পুড়েছে ২২ হাজার একর এলাকা। এখন পর্যন্ত প্যালিসেইডস দাবানল মাত্র ১১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। নতুন করে এই আগুন বৃদ্ধি পাওয়ার আগে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা প্যালিসেইডস দাবানল ও লস অ্যাঞ্জেলেসের পূর্বাঞ্চলে এটন দাবানল নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতির কথা জানিয়েছিলেন। এ দুই দাবানলকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলা হচ্ছে। দুই দাবানলে একত্রে ১৪৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের পূর্বাভাসে বলা হয়, লস অ্যাঞ্জেলেস ও ভেঞ্চুরা কাউন্টিতে স্থানীয় সময় রোববার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬০ মাইল পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ ছাড়াও আগুনের কারণে লস অ্যাঞ্জেলেসের বাতাসে দূষণের মাত্রা ছাড়িয়েছে। অস্বাস্থ্যকর বাতাসের জন্য স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া এবং বাসিন্দাদের মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল শুরু হয় গত মঙ্গলবার। ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও তা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দাবানলের শুরুর দিকে বাতাসের গতি ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছিল। গত শুক্রবার তা অনেকটা কমে আসে। সেখানে আরও ৫৭ হাজার অবকাঠামো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষকে। এর বাইরে আরও ১ লাখ ৬৬ হাজার বাসিন্দাকে বলা হয়েছে, প্রয়োজন পড়লে তাদের এলাকা ছাড়তে হতে পারে।