শুক্রবার ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

রাজশাহীতে নলকূপে পড়া শিশু সাজিদ বেঁচে নেই, ৩২ ঘণ্টা পর উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

Rising Cumilla - Child falls into unprotected deep tubewell in Rajshahi, rescued after 28 hours
রাজশাহীতে অরক্ষিত গভীর নলকূপে শিশুর পতন, ২৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার/ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোরে অরক্ষিত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে আর বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানান, রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হলেও তার আগেই তার মৃত্যু ঘটে।

এর আগে রাত ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সাজিদকে গর্ত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের অভিযান শেষে তাকে তুলে আনা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে জীবিত রাখা সম্ভব হয়নি।

বুধবার দুপুরে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট গ্রামে দুর্ঘটনাটি ঘটে। সাজিদ তার মা ও ভাইকে নিয়ে বাড়ির পাশের একটি খড়ঢাকা জমি পার হচ্ছিল। শিশুটির মা জানতেন না—খড়ের নিচেই রয়েছে একটি পরিত্যক্ত ও অরক্ষিত গভীর নলকূপের গর্ত। হাঁটার এক পর্যায়ে হঠাৎই সাজিদ নিচে পড়ে যায়। পেছন থেকে ‘মা মা’ চিৎকার শুনে মা ফিরে তাকান, কিন্তু তখন আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। খড় সরাতেই বেরিয়ে আসে মৃত্যুকূপটি।

স্থানীয়রা জানান, গত বছর এলাকার এক ব্যক্তি এখানে গভীর নলকূপ স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন। ১২০ ফুট নিচেও পানি না পাওয়ায় তিনি কাজ বন্ধ করে পাইপটিকে মুখ খোলা অবস্থায় ফেলে রাখেন। পরের বছরের বর্ষায় গর্তের মুখ আরও বড় হয়ে যায়। কোনো সতর্কবার্তা, বাঁধা বা ঢাকনা না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ তাদের।

দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। গর্তের পাশে কাটে সাজিদের মায়ের নির্ঘুম রাত। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় চলতে থাকে তার অবিরাম কান্না ও প্রার্থনা। শুরুর দিকে গর্তের ভেতর থেকে শিশুটির ক্ষীণ আওয়াজ পাওয়া গেলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শব্দ বন্ধ হয়ে যায়, যা উদ্ধারকর্মীদের আতঙ্ক বাড়িয়ে তোলে।

তবে শেষ পর্যন্ত আশার আলো জাগাতে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। মেডিকেল টিম ও স্থানীয় প্রশাসন পুরো সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। সন্ধ্যায় লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছিলেন—সাজিদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, তবে জীবিত বা মৃত যেভাবেই হোক না কেন, উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। প্রতিশ্রুতি মতোই অভিযান অব্যাহত রেখে শিশুটিকে উদ্ধার করা হলেও জীবনের কাছে হার মানতে হলো ছোট্ট সাজিদকে।

আরও পড়ুন