শনিবার ১ নভেম্বর, ২০২৫

রাজনীতি নিষিদ্ধ নোবিপ্রবিতে ছাত্রদলের শোডাউন- মিছিল

মো: নাঈমুর রহমান, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি

রাজনীতি নিষিদ্ধ নোবিপ্রবিতে ছাত্রদলের শোডাউন- মিছিল
রাজনীতি নিষিদ্ধ নোবিপ্রবিতে ছাত্রদলের শোডাউন- মিছিল/ছবি: প্রতিনিধি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক শোডাউন ও মিছিল করেছে সদ্য গঠিত নোবিপ্রবি ছাত্রদলের কমিটির নেতৃবৃন্দ।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ১২:০০টার দিকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিল করে। মিছিলে নবগঠিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা এবং নোবিপ্রবি সাদা দলের কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

গত ০৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত রিজেন্ট বোর্ডের জরুরি সভায় অফিস আদেশ ৮২১৯(১৫) তে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি ও দলাদলি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তা স্বত্বেও ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য শোডাউন দিয়েছে ছাত্রদল।এ ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরেই সকল ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। তবুও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

ছাত্রদলের মিছিল সম্পর্কে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল হক ফয়সাল জানান, ‘আমি মনে করি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ের প্রধান কাজ শিক্ষা,গবেষণা ও আবিষ্কারের দিকে নিজেদের নিয়োজিত করা। শিক্ষাঙ্গণকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্‌ম বানালে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে পড়বে’।

মিছিলের ব্যাপারে নোবিপ্রবি ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি জাহিদ হাসান জানান,’আজকের মিছিল মূলত মিছিল ছিল না।সেখানে মিছিলের মতো দেখা গেছে মূলত কিছু নেতা কর্মীরা দলীয় স্লোগান দিয়েছে সেটা মূলত আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করি তারা উঠতে, বসতে, ঘুমাতেই দিয়ে থাকি।

এটা আমাদের নতুন কমিটি প্রকাশিত হওয়ার পরে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছি। আমরা সাদা দলের শিক্ষকদের সাথে স্বাক্ষাৎ করেছি। ওনাদের সাথে নিয়ে মসজিদে জিয়া পরিবারের জন্য প্রার্থনা করে আমাদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য মহোদয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎও করেছি। এতটুকুই,এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ ছিল না’।

রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে মিছিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে নোবিপ্রবি ছাত্রদল সভাপতি জাহিদ হাসান বলেন,আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইন করার পর থেকে আমরা দলীয় কার্যক্রম আমাদের ক্যামপাসের বাহিরেই করেছি। আমরা দফায় দফায় স্মারকলিপি দিয়েছি রাজনীতি চালু করার জন্য। আজকেও উপ-উপাচার্যের নিকট আবেদন করেছি। রাজনীতি একটা প্রবাহমান নদীর মতো, এটাকে বাধ্য করে বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। আমরা এর আগেও দুইবার লিখিত আবেদন করেছি। আজকেও ওনার নিকট বিষয়টা জানিয়েছি’।

মিছিলে উপস্থিত নোবিপ্রবি সাদা দলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক (গ্রেড-১) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এই ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে চাই না। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও সব রাজনীতি হচ্ছে সেটা তোমরাও জানো আমিও জানি। সুতরাং এই ব্যাপারে আমি কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না’।

মিছিলের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ. এফ. এম. আরিফুর রহমান বলেন, মিছিলের ব্যাপারে আমি অবগত আছি। আমি তাদের ফোন করেছি। দায়িত্বশীল আচরণের ব্যাপারে বলেছি। এরপরে তারা মিছিল বন্ধ করেছে। এই বিষয়ে আমি একা সিদ্ধান্ত জানাতে পারি না। কারণ এখানে, আমার থেকেও বিজ্ঞ, সিনিয়র, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী শিক্ষকরাও ছিলেন। এই ব্যাপোরে উপাচার্য মহোদয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আমি স্যারকে এই বিষয়ে জানিয়েছি এবং যথাযথ তথ্য পাঠিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, ‘আমি প্রো-ভিসি মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি। প্রো -ভিসি মহোদয় আমাকে জানালো কিছু শিক্ষার্থী ওনার সাথে দেখা করেছেন। কোন দলের কারা এই বিষয়ে জানায়নি। শিক্ষকরা যারা যোগ দিয়েছে এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতিও সিন্ডিকেটের আইনে নিষিদ্ধ। এরপরও কেউ যদি রাজনীতি করে এটা শোভনীয় কাজ নয়। আমরা প্রক্টরিয়াল বডির সাথে বসে যাচাই বাঁচাই করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবো। যতটুকু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-মোতাবেক প্রেসারাইজ করা লাগে,আমরা তা করবো।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, নোবিপ্রবি শাখাও প্রকাশ্যে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্রশিবির নোবিপ্রবি শাখার কার্যক্রম পরিচালনা করা নিয়েও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

আরও পড়ুন