গত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) রাজধানী ঢাকায় খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরির মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যদিও সার্বিকভাবে ডিএমপির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে বলে মনে করছে কর্মকর্তারা।
ডিএমপির মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ডিসি মিডিয়া বলেন, এই সময়ে ৫০টি থানায় মোট ১ হাজার ৬৮টি চুরির মামলা, ২৪৮টি ছিনতাই, ১২১টি খুন এবং ৩৩টি ডাকাতির মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি মাসে গড়ে ২০টির বেশি খুন, পাঁচটি ডাকাতি ও ৪১টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, মাসিক ভিত্তিতে ৭০টি চাঁদাবাজির মামলাও নথিভুক্ত হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা মহানগর পুলিশ নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
অপরাধ দমনে ডিএমপির চলমান কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরে মোহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে টহল ও চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপিতে মোট ৪৪১টি টহল টিম মোতায়েন ছিল, যার মধ্যে ২৫৯টি দিনের বেলায় এবং ২২১টি রাতের বেলায় কাজ করেছে। এছাড়াও ২২১টি ফুট পেট্রোল এবং ২৭টি মোটর পেট্রোল টিম সক্রিয় ছিল।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পরিচালিত সাঁড়াশি অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৪১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ডাকাত, চোর, মাদক কারবারি এবং পরোয়ানাভুক্ত আসামি রয়েছেন। এই অভিযানে মোবাইল ও নগদ ১৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যও জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও (ডিবি) অপরাধ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। গতকাল ডিবি ওয়ারীর একটি দল অভিযান চালিয়ে ১২৩টি চোরাই মোবাইলসহ একটি চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
এছাড়াও, মোহাম্মদপুরের আলোচিত কিশোর গ্যাং ‘কব্জি কাটা গ্রুপ’-এর বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এই গ্রুপের প্রধান আনোয়ারের দুই সহযোগী নিশাত ও রাসেল ওরফে পেস্টিং রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সম্প্রতি গুলশানে একজন সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদাদাবির ঘটনায় ৫ জন বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। কলাবাগান থানায় এই ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ডিসি (মিডিয়া)।
মোহাম্মদ তালেবুর রহমান আরও বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিএমপি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গোয়েন্দা তথ্যের সঠিক ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখতে ডিএমপি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
