মার্চ ৬, ২০২৫

বৃহস্পতিবার ৬ মার্চ, ২০২৫

রমজানের ইফতারে বৈচিত্র্য: কোন দেশে কী খাওয়া হয়?

Rising Cumilla - Ramadan Ifter
প্রতীকি ছবি/সংগৃহীত

মুসলমানদের জন্য রমজান হলো সবচেয়ে পবিত্র মাস। এই মাসে ইফতারের সময় বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত খেজুরের মাধ্যমে ইফতার শুরু করা হয়। ধর্ম এক হলেও দেশে সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে তাদের সবার ইফতার আয়োজন এক নয়। তাই বিভিন্ন দেশের ইফতার আয়োজনে রয়েছে বৈচিত্র্য।

চলুন কয়েকটি দেশের ঐতিহ্যবাহী ইফতারি খাবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

  • পাকিস্তান:
    • ডব্লিউপিআর-এর তথ্য মতে, পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯৮ ভাগের বেশি অর্থাৎ ২৪ কোটি মানুষ মুসলিম।
    • পাকিস্তানে সাধারণত পানি এবং খেজুরের পাশাপাশি মাংস-রুটির মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রাধান্য পায়।
    • এছাড়াও ইফতারে নানা ধরনের কাবাব, তান্দুরি, টিক্কার উপস্থিতিও দেখা যায়।
    • এর মধ্যে জনপ্রিয় একটি পদ হলো হালিম। এতে ব্যবহৃত হয়- মসুর ডাল, গম ও মাংস (গরু, খাসি বা মুরগি)। স্বাদ বাড়াতে আনুষাঙ্গিক অনেক কিছুই ব্যবহার করা হয়।
  • ইন্দোনেশিয়া:
    • এ দেশের মানুষ সাধারণত ইফতারে তেল ও মশলা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে বিভিন্ন রকম ফল এবং ফলের জুসকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
    • এছাড়াও তারা মিষ্টিজাতীয় খাবারও পরিবেশনায় রাখেন।
    • ইন্দোনেশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্যা জাকার্তা পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইফতারের সময় “বুবুর চ্যান্ডিল” নামক এক ধরনের মিষ্টান্ন; মিষ্টি আলু দিয়ে তৈরি বিজি সালাক; কলা, কলা দিয়ে তৈরি এস পিসাং ইজোসহ আরও নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করা হয়।
  • নাইজেরিয়া:
    • মুসলিম জনগোষ্ঠীর দিক থেকে শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম নাইজেরিয়া। দেশটিতে মুসলিমের সংখ্যা প্রায় দশ কোটি।
    • নাইজেরিয়ায় ইফতারের সময় সাধারণত শর্করা জাতীয় খাবার ও ফলমূলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
    • এসময় নাইজেরিয়ানদের ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার- জল্লফ রাইট, মই মই(পুডিং), ইয়াম (এক ধরনের আলু) মাসা (রাইস কেক), ইলুবো ও আমালার (ইয়াম দিয়ে তৈরি এক বিশেষ খাবার) তাদের ইফতারের তালিকায় থাকে।
  • মিশর:
    • দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৯% মুসলিম।
    • দেশটিতে ইফতার মানেই একধরনের আনন্দ-উৎসব।
    • মিশরীয় মুসলিমরা ইফতারের সময় মৃদু আলো দেয় এমন লণ্ঠন জ্বালিয়ে থাকে।
    • এসময় তাদের ইফতার টেবিলে থাকে নানা ধরনের খাবারের সমারোহ। তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো “আতায়েফ” ও “কুনাফা”।
    • আতায়েফ হলো এক ধরনের প্যানকেক ও কুনাফা হলো এক ধরনের সিরাপ। এই দুটো খাবার মিশরীয় মুসলমানদের ইফতারের অবিচ্ছেদ্য অংশও বলা যেতে পারে। এছাড়াও অনেকে ইফতারে বাদামি রুটি এবং মটরশুঁটি, টমেটো, বাদাম ও অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি ‘‘ফুল মেদেমাস’’ নামক এক ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন।
  • তুরস্ক:
    • তুরস্কের প্রায় ৯৮% মানুষ মুসলিম।
    • দেশটির ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো এখন পুরো বিশ্বব্যাপী “টার্কিশ ফুড” হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
    • তবে অন্যান্য দেশের মতো তাদেরও পছন্দের শীর্ষে রয়েছে খেজুর।
    • তবে রমজানে দেশটির মুসলমানদের সবচেয়ে পছন্দের খাবার হলো “রামাজান পিদেসি”, যা মূলত এক ধরনের রুটি। এটি নান রুটির মতো একই পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়।
  • ইরান:
    • ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের মোট জনসংখ্যার ৯২% মানুষ মুসলিম।
    • রুটি, স্যুপ, র‍্যাপ, কাবাবের মতো সুপরিচিত খাবারের পাশাপাশি ইফতারে ইরানের ঘরে ঘরে তৈরি হয় জাফরানের সুগন্ধিযুক্ত এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী পার্শিয়ান হালুয়া।
    • এছাড়াও জাফরান চাল দিয়ে তৈরি “শোলেহ জার্দ” নামক এক ধরনের পুডিংও ইরানিদের খুব প্রিয়। সেইসঙ্গে তাদের্ ইফতারে থাকে তাবরেজি চিজ, জুলবিয়া (জিলাপী), বামিয়েহ নামক একধরনের মিষ্টান্নও।
  • সৌদি আরব:
    • আরব নিউজের এক প্রতিবেদন বলা হয়, সৌদি মুসলিমরা ইফতারের শুরুতে “গাহওয়া” নামক অ্যারাবিক কফি পান করেন এবং সেইসঙ্গে অবশ্যই খেজুর খান।
    • এরপর তারা মাগরিবের নামাজ পড়েন। নামাজের পরই সাধারণত তারা ভারী খাবার খান।
    • দেশটির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের মানুষ ইফতারের সময় আসিদাহ, মারগগ, মাফরৌক ও মাতাজিজ নামক ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে থাকেন। এগুলো বাদামি আটা, গরুর মাংস, সবজি, মধু, পিঁয়াজ বা ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়।

সূত্র: বিবিসি