শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে শোচনীয় হারের পর আরও একটি বড় দুঃসংবাদ পেলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

শনিবার কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয়টিতে ৭৮ রান ও ইনিংস ব্যবধানে হারের পরই এই ঘোষণা আসে। শুধু টেস্ট নয়, চলতি শ্রীলঙ্কা সিরিজ শুরুর আগেই ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকেও সরে দাঁড়ানোর খবর পান শান্ত। এর আগে বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বও ছেড়েছিলেন তিনি।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে শান্ত নিজেই তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, "আমি টেস্ট দলের নেতৃত্বে আর থাকতে চাই না।" এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-কেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

শান্ত জানালেন ঠিক কী কারণে টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়লেন তিনি, ‘আমি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। টেস্ট ফরম্যাটে আর এই দায়িত্ব পালন করতে চাই না। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা ব্যক্তিগত কিছু নয়। দলের ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ড্রেসিংরুমে লম্বা সময় ধরে থাকার সুযোগ আমার হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তিন ফরম্যাটে তিন ব্যক্তির অধিনায়ক থাকলে সমস্যা হতে পারে। যদি ক্রিকেট বোর্ড মনে করে, তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক থাকবে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।’

শান্ত আরও জানালেন, কোনো রাগ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেননি তিনি, ‘আমি আশা রাখব, কেউ যেন মনে না করে যে আমি ব্যক্তিগত রাগ থেকে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা আমি দলের ভালোর জন্য করলাম। এখানে ব্যক্তিগত কিছুই নেই।’

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু তার নেতৃত্বাধীন সময়টা খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। এই বছরের শুরুতেই তিনি টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়েন, যেখানে তার স্থলাভিষিক্ত হন লিটন দাস। এরপর চলমান শ্রীলঙ্কা সিরিজ শুরুর আগে ওয়ানডে দলের নেতৃত্বেও তাকে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়, সেই দায়িত্ব পান মেহেদী হাসান মিরাজ।

কলম্বো টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে থেকেই শান্তর নেতৃত্ব ছাড়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। সেই গুঞ্জন বাস্তবতায় রূপ নিল!

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ত্রয়োদশ টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার অধীনে বাংলাদেশ ১৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জয়গুলো আসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি, পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ম্যাচে।

ওয়ানডে ফরম্যাটে শান্তর অধীনে বাংলাদেশ ১৩ ম্যাচ খেলে ৪টিতে জয় পেয়েছে।

অধিনায়ক হিসেবে শান্তর ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্স অবশ্য বেশ উজ্জ্বল ছিল। টেস্টে তার ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৩২, সেখানে অধিনায়ক হিসেবে তার গড় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬। তার পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে ৭টি সেঞ্চুরি ও ৫টি ফিফটির মধ্যে ৩টি সেঞ্চুরি ও ২টি অর্ধশতক এসেছে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর। এমনকি সবশেষ চলতি সিরিজে তিনি অধিনায়ক হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসেই শতক হাঁকানোর নজির গড়েন – গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪৮ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৫ রানে অপরাজিত থাকেন।

ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে তিনি আরও ভালো খেলেছেন। এই ফরম্যাটে অধিনায়ক হিসেবে তার ব্যাটিং গড় ৫১। তার ক্যারিয়ারসেরা অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংসটিও অধিনায়ক থাকাকালেই এসেছে তার ব্যাট থেকে।

এ সময়ে তার স্ট্রাইক রেটেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে।