
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় এক নারীকে নির্যাতন এবং তার অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে দুই ভাইয়ের পারিবারিক বিরোধ। র্যাবের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বড় ভাই ফজর আলীর ওপর প্রতিশোধ নিতেই ছোট ভাই শাহ পরান এই ঘৃণ্য পরিকল্পনা করেন।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সকাল ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই শাহ পরান একটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরি করে ভুক্তভোগী নারী ও তার বড় ভাই ফজর আলীকে নির্যাতনের ফাঁদে ফেলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ফজর আলীর সম্মানহানি করা।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে র্যাব জানায়, বাহেরচর গ্রামের শহীদ মিয়ার দুই ছেলে, বড় ফজর আলী এবং ছোট শাহ পরান, দীর্ঘদিন ধরে একই নারীর প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে আসছিলেন এবং তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। প্রায় দুই মাস আগে তাদের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে বাকবিতণ্ডা এবং মারামারিও হয়। পরবর্তীতে গ্রাম্য সালিশে সকলের সামনে ফজর আলী তার ছোট ভাই শাহ পরানকে চড় মারেন। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতেই শাহ পরান সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
একপর্যায়ে ভুক্তভোগী নারীর মা সুদের বিনিময়ে ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেন। ২৬ জুনের রাতে এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে ঘটনাটি ঘটানো হয়।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায়, ভুক্তভোগীর বাবা-মা বাড়িতে না থাকার সুযোগে ফজর আলী সুদের টাকা আদায়ের অজুহাতে ভুক্তভোগীর শয়নকক্ষে প্রবেশ করেন। প্রায় ২০ মিনিট পর শাহ পরান এবং তার সহযোগী ৮-১০ জন যুবক, যাদের মধ্যে আবুল কালাম, অনিক, আরিফ, সুমন ও রমজান উল্লেখযোগ্য, জোরপূর্বক দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। তারা ওই নারীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়, তার শ্লীলতাহানি করে এবং অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
র্যাব আরও জানায়, শাহ পরান ইমো অ্যাপের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে অন্যদের ঘটনাস্থলে ডেকে এনেছিলেন। ঘটনার পরপরই সে আত্মগোপনে চলে যায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদে সে পুরো ঘটনার দায় স্বীকার করে।
শাহ পরানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে মুরাদনগর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এই ঘটনায় জড়িত অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন নির্যাতিত নারী নিজেই বাদী হয়ে কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। এখন পর্যন্ত ধর্ষণে অভিযুক্তসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে তৎপরতা শুরু করে।