প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনো মুক্তি পায়নি বাংলাদেশী নাবিকরা। উল্টো তাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা। এদিকে আটকা পড়াদের পরিবারে উদ্বেগ বেড়েছে। সোমালিয়ার জলদস্যুরা মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরের বাংলাদেশের জাহাজ এম ভি আবদুল্লাহ দখল করে ২৩ জন নাবিককে বন্দী করেছে। এরই মধ্যে ভয়ানক হুমকির খবর ভেসে এসেছে জিম্মি জাহাজটি থেকে।
জলদস্যুদের হাতে বন্দী জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীর কাছে অডিও মেসেজ পাঠিয়েছেন। ওই বার্তা এসেছে গণমাধ্যমের হাতে।
মুক্তিপণ না পেলে সবাইকে মেরে ফেলবে জলদস্যুরা জানিয়ে ওই অডিও বার্তায় আতিক জানান, ‘এই বার্তাটা সবাইকে পৌঁছে দিয়ো। আমাদের সবার কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, তাদের (জলদস্যু) যদি টাকা (মুক্তিপণের অর্থ) না দেয়া হয়, তবে আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলা হয়েছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিয়ো।’
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাতে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে আতিক উল্লাহ খানের বাসায় গেলে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো তার বার্তাটি স্বজনেরা সাংবাদিকদের দেখিয়েছেন। জানা গেছে, আতিকের বাড়ি চন্দনাইশের বরকল এলাকায়। মা, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকেন শহরের নন্দনকানন এলাকায়। মা শাহানুর আকতার ছেলের চিন্তায় অস্থির। তিনি কখনো কাঁদছেন, কখনো-বা নামাজে দাঁড়িয়ে ছেলের জন্য দোয়া-দরুদ পড়ছেন।
শাহানুর বলেন, মাগরিবের সময় ছেলের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন আতিক তাকে বলেছেন, তাদের ৫০ জন জলদস্যু ঘিরে রেখেছে। একটা কেবিনে বন্দী সবাই। তাদের সোমালিয়া নিয়ে যাচ্ছে। আড়াই দিনের মতো লাগবে ওখানে পৌঁছাতে। সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন আতিক।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০ জনের মতো জলদস্যু জাহাজে আছে।
জাহাজটি মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছিল। বাংলাদেশের সময় বেলা দেড়টার দিকে সোমালিয়া জলদস্যুরা জাহাজে উঠে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণ নেয়।
জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজটিতে থাকা ২৩ জন নাবিকের সবাই বাংলাদেশী। জাহাজটির মালিক হলো চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেড।
যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন (ইউকে এমটিও) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, এই ঘটনাটি ঘটেছে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে। জলদস্যুরা একটি বড় ও একটি ছোট নৌযানে করে আসে। তারা ওই এলাকায় চলাচলকারী অন্য জাহাজগুলোতে সতর্ক করে দিয়েছে।
এসআর শিপিংয়ের সিইও মোহাম্মদ মেহেরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে জাহাজ থেকে তাদের বার্তা পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, ‘জাহাজ পুরোপুরি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে। আমাদের ২৩ জন নাবিক ও ক্রু জাহাজে আছেন। জলদস্যুরা তাদের বন্দী করেছে। তাদের জাহাজের কেবিনে রেখেছে। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।’