মার্চ ১৩, ২০২৫

বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ, ২০২৫

‘মায়া’

opinion

সেদিন শুভ্র আকাশে লাল আবাই ভেসে যাচ্ছিল মেঘ, তবে এই অপরুপ দৃশ্য আমার চোখকে আপ্লুত করতে পারেনি, কেননা সেদিন আকাশের নিচে দেখেছি এক পরীকে। আমার হৃদয় করেছে হরণ। প্রথম দেখাতে মায়ায় পড়ে গেলাম, অন্যান্য মেয়ের মত যদি তার ওপর একটা ক্ষনিকের অনুভূতি থাকতো তাহলে খুব সহজে ভুলে যেতাম কিন্তু আমি যে মায়ায় পড়েছি!

প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় তাকে স্বপ্নে দেখি আর ঘুম থেকে উঠে প্রথম তার চেহারা চোখে ভাসে। তার কাজল কালো চোখ আমার চোখকে বারবার ধরা দেয়। আর হরিণী চোখকে ভুলা যায় না কখনোই। তার মুখ যেন চাঁদকেও সৌন্দর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মিতেতে দ্বিগণ্ডিত করবে। আর চুল যেন চেহারার সৌন্দর্য আরো বর্ধিত করছে।

এভাবে ভাবতে ভাবতে কেটে গেল কয়েকদিন , পায় না আর তার কোন দেখা। মনের মধ্যে যেন কেমন এক শূন্যতার অনুভূতি হচ্ছে। মনে তৃষ্ণা বেড়েই যাচ্ছে তাকে এক পলক দেখার। তবে তার জন্য বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয় নি, ষোলতম দিনেই তাকে আবার দেখলাম।

এবার অথচ সামনে কিন্তু আমার হৃদয়ের গতিবিধি বৃদ্ধি পেল। আমি কেমন যেন শূন্যে ভাসছি, সে আমার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে! এতদিন তাকে নিয়ে যে কল্পনা , তার বিন্দুমাত্র তাকে শোনাতে পারলাম না। আমি নিষ্ফলভাবে তার দিকে চেয়ে আছি। আমি দাঁড়িয়ে আছি সে স্থানে! তবে সে কবেই যে সে স্থান ত্যাগ করলো তা বুঝতে পারলাম না। ঐদিন আমার আর ঘুম নিয়ন্ত্রণে ছিল না, পুরো রাত তার কথাই ভাবলাম।

ভাগ্যের কাছে অসহায় আমি; আবার পাচ্ছিনা তার দেখা কি করা যায়? তার সম্পর্কে তো কিছু জানিও না যে খবর নেব, সে কই? আমাকে এভাবে জালে আটকে তুমি হারাচ্ছো বারংবার। রাত যেন আমার কাছে বিষন্নতায় পরিপূর্ণতা পেল। আমি ভাবছি অনুভূতির খানিকটুকু যদি জানাতে পারতাম তবে মনটা হালকা হতো। সপ্তাহ খানেক পরে আবার দেখা হল।

আবারো একই অবস্থা হৃদয়ের গতিবিধি বৃদ্ধি পেল। বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনলাম এবং আমি আবার দাঁড়িয়ে আছি, আর আছি কল্পনায় অথচ সে আমার পাশেই। তার সাথে কথা বলার শক্তিটুকু আমার নেই। হঠাৎ ধাক্কা লাগার অনুভূতি হলো, দেখি তার বই নিচে পড়ে গেল।

এখন আমি কল্পনার জগত থেকে বের হয়ে বাস্ততে ফিরে এলাম, বইগুলো নিচ থেকে উঠাতেই সে আমাকে ধমক দিয়ে বলল চোখে কি দেখেন না নাকি? রাস্তায় মেয়ে দেখলে শুধু ধাক্কা দিতে ইচ্ছে করে। আমি খুব বিনয়ের সাথে তার কাছে ক্ষমা চাইলাম এবং সেদিন আর সাহস হলো তাকে কিছু বলার। মেয়েটা আমার চেহারা দেখে আর কিছু বলেনি কারণ আমার অনুভূতি এবং ক্ষমা চাওয়াটা সে বুঝতে পারছে। পরে দেখলাম আমি যে কোচিং এ পড়ি সে ভর্তি হয়েছে একই কোচিংয়ে। আমি মনে মনে ভাবলাম একই কোচিং এ পড়ি কিন্তু দেখা হল না কখনো? পরে জানতে পারলাম নতুন এসেছে। এভাবে নতুন এসেই আমার হৃদয় চুরি করে নিবে ভাবতেই কেমন জানি লাগছে।

কারণ আমি যে কখনো কারো মায়ায় পড়িনি। মনে হচ্ছে তাকে না পেলে আমি সত্তাটার কোন দাম ই নেই।

এরপরে কোচিংয়ে প্রথম দেখলাম খুব কাছ থেকে। আবারও দুঃখ প্রকাশ করে তাকে আমার নামটা জানালাম সেও তার নামটা জানালো এভাবে প্রথম দিনের পরিচয় শেষ হলো। এখন নিয়মিত কোচিংয়ে দেখা হয় জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল একটা বন্ধুকে বলেছিলাম তাকে পছন্দ করি এ কথাটি সে পুরো কোচিংয়ে ছড়িয়ে দিল এবং মেয়েটি ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে আমার সাথে আর কোন কথা বলছে না।

এভাবে হাত গুটিয়ে থেকে পরিস্থিতিকে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না তাই তার কাছে আবার দুঃখ প্রকাশ করলাম, সে এবার কথা শুনতে নারাজ। অনেক কষ্ট করে তাকে মানালাম। তার জন্য আমাকে চকলেট আরো কিছু দুঃখ প্রকাশের নোট লিখে পাঠাতে হল।একদিন সাহস করে পছন্দের কথাটা বলেই ফেললাম সে এমন ভাবে রিয়েক্ট করল যে, সে আমাকে চিনেই না। আমি আর কথা বাড়ালাম না।

এরপরে নিজের হৃদয়কে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু কখনোই বা কোনদিনও তাকে ভুলতে পারলাম না। বরং প্রত্যেকটা দিন তার চেহারা চোখের সামনে ভাসে। নিজের ব্যক্তিগত ইগোকে বিসর্জন দিয়ে তার সাথে আবার কথা বলতে গেলাম সেও দেখছি কিছুটা কথা বলার চেষ্টা করছে বুঝতে পারলাম। সে কিছুটা হলেও আগে থেকে ফ্লেক্সিবল হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে অল্প কয়দিনের মধ্যে আমাদের বন্ধুত্বটা পাকাপোক্ত হলো।

তার সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে গেল এবং তাকে খুব কাছ থেকে দেখার তৃপ্তিটা আস্তে আস্তে মিটতে লাগলো। আমি প্রবলভাবে তার মায়ায় আটকে গেছি, তবে তাকে আর মনের কথা বলার সাহস হচ্ছিল না বন্ধুরা জোরাজুরি করছে অনেক। মনের কথা বললে ভাবছি যদি বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায়।

তবুও মনের চাপা ভয়কে বাদ দিয়ে শুক্রবারের দুআ শেষে তাকে জানিয়ে দিলাম সে অব্যক্ত মনের ভাষা। সে প্রথমে কিছুই জানালো না আমি ভয়ে ছিলাম, না জানি আর কথা হয় কিনা কোন কোনদিন? তিনদিন পরে সে আমার সাথে দেখা করলো কিন্তু সে কোচিং আর আসলোনা তিন দিনের মধ্যে। আমি ভয়ে ছিলাম এবার কথা বলে কিনা? কিন্তু সে আমাকে এক দিকে ডেকে নিয়ে গেল! একটি হাসির মাধ্যমে প্রথম কৌশল বিনিময়টা শুরু করল! এবং আমার ভয়টা কাটতে লাগলো ধীরে ধীরে। দেখছি সে কিছুটা আমার সাথে সহজভাবে কথা বলছে, বুঝতে পারলাম সে রাজি আমার প্রস্তাবে।

এভাবে পাবো বুঝতে পারিনি। এ যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছি। খুশিতে আমি আত্মহারা। আর মনে হচ্ছে সর্বক্ষণ জানি একটা চাঁদের সাথে ঘোরাফেরা করছি। তার সাথে ঝগড়া ও মধুর খুনসুটি আর কথোপকথন যেন আমাদের সম্পর্ক কি আরো গাঢ় করছে। এভাবেই কাটছে দিন সুন্দর হচ্ছে আমার মুহূর্তগুলো আজ অব্দি। ভালোবাসা যেন এভাবেই বেঁচে থাকুক পৃথিবীর প্রতিটা কোণায়।

মোঃ মারুফুর রহমান

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। কবি,গল্পকার ও সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।