অক্টোবর ১৮, ২০২৪

শুক্রবার ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাই কমাতে পারে আত্মহত্যা প্রবণতা

Rising Cumilla - mental health
প্রতীকি ছবি/সংগৃহীত

মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতে প্রতিবছর ১০ই অক্টোবর মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। আজকাল মানুষজন শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছুটা সচেতনতা বাড়ালেও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত আছেন এমন মানুষের সংখ্যা ঢের বেশি পাওয়া যাবে।

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। শারীরিক সুস্থ মানুষ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে তাহলে অসমন্বয়ের কারণে তার কাজকর্ম, চলাফেরা, আচার-আচরণ সবকিছুতেই তার প্রভাব ফেলে চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO এর মতে স্বাস্থ্য হল ব্যক্তির শারীরিক , মানসিক এবং সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসে দেশব্যাপী পরিচালিত এক বৈজ্ঞানিক জরিপে দেখা যায় এদেশের প্রায় সোয়া দুই কোটি অধিবাসী কোনো না কোনো মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন। করোনা পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য মানুষ নিজের জীবননাশ করতেও পিছপা হচ্ছেন না।

চলতি বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য শ্রেণি পেশার মানুষজন নিজ চোখে মৃত্যু মতো দেখেছে। এ বর্বরতায় বন্ধু,পাড়া প্রতিবেশি ও সহপাঠীদের হারিয়ে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আন্দোলনের নৃশংস্য পরিণতি দেশের জনগণকে গভীর মানসিক যন্ত্রণায় ফেলেছে। অনেকেই বিভিন্নরকম ট্রমার মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে নইলে ভবিষ্যতে এর খেসারত দিতে হবে। এ জন্য অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাযথ মত প্রকাশের সুযোগ, পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন: বিতর্ক, লেখালেখি, খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের ব্যাবস্থা করা এবং সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা করা। সেই সাথে ‘পোস্ট ট্রমা-স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে’ আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের ব্যাবস্থা করতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয় শুধুমাত্র ব্যাক্তিজীবনে প্রভাব ফেলে এমনটা কখনোই নয়। কর্মক্ষেত্রেও বিভিন্ন সমস্যা যেমন: উৎপাদনশীলতা হ্রাস, দায়িত্ব পালনে অনীহা, অনুপস্থিতি থাকার প্রবণতা ও বারবার কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনসহ বেশকিছু সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই এর গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বছর ২০২৪ সালে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এখনই সময়’। সুস্থ কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি, সুস্থ জীবনযাত্রার প্রচার, কাজের চাপ কমানো ও বৈষম্য পরিহার করে কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি রোধ করা সম্ভব। এর ফলে কোম্পানির সামগ্রিক সাফল্য বৃদ্ধি পাবে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৯৪, ৫% মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। ২০২২ সালে প্রকাশিত তথ্যমতে দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। পুরো দেশে প্রতি এক লক্ষ মানুষের বিপরীতে মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা মাত্র ১১৭ জন। এই পরিসংখ্যান অবশ্যই চিন্তাজনক— কারণ এই বিশাল জনসমষ্টিকে বাদ দিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। দেশের এই বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে মৌলিক অধিকার আদায় সরকারের দায়িত্ব। এছাড়াও সরকারকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতে সেমিনার সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা এবং মানুষজনকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত করা প্রয়োজন।

উপরের প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক আলোচনার যবনিকা ঘটিয়ে এবার আসা যাক আত্মকেন্দ্রীক আলোচনায়। নিজ মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজেকে কাজ করতে হবে বেশি। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা,স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম,কৃতজ্ঞতার অভ্যাস তৈরি, বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা করা, সম্পর্ক তৈরি, পরিবারের সবার সাথে সময় কাটানো, দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করা, মাদকদ্রব্য পরিহার করা এবং দরকার হলে মনেরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ কেন না মানসিক রোগ বিজ্ঞাসম্মত চিকিৎসায় পরিপূর্ণ ভালো হয়ে যায়। পরিশেষে আমাদের নিজেদের একে অপরের খোঁজ খবর বৃদ্ধি করা যাতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত না হই।

লেখা: আল মাসুম হোসেন শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।