
মাত্র একজন ভিজিটর দিয়ে চলছে মাইজখার ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। তাও আবার নিয়মিত না, তিনি মাঝেমধ্যে আসেন। যার কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হাজারো মানুষ
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র জনবল সংকটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রটিতে কাগজে-কলমে চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকসহ একাধিক পদ থাকলেও গত একমাস দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র একজন ভিজিটর।
এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে পূর্বে দুইজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকলেও পরবর্তীতে তারা চলে গেলে, এখানে একজন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি গত এক মাস আগে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পর এই কেন্দ্রের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পড়ে ডিজিটরের উপর। ভিজিটর নিয়মিত কেন্দ্রে না আসার কারণে উক্ত ইউনিয়নের মানুষদেরকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। যার কারনে প্রতিদিন আশপাশের হাজারো মানুষ প্রত্যাশিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উক্ত কেন্দ্রের আয়া পারুল আক্তার প্রতিদিন সকালবেলা হলে কেন্দ্রের দরজা খুলে দিয়ে বাসায় চলে যান এবং বিকেল বেলা এসে বন্ধ করেন। কেন্দ্রের সামনের রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করার সময় মানুষ দরজা খোলা থেকে অনেকেই ওষুধের জন্য ভিতরে গিয়ে দেখেন কেউ নাই। এ ব্যাপারে উক্ত কেন্দ্রের ভিজিটরের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৭০ জন রোগী এ কেন্দ্রে আসেন। তবে চিকিৎসক না থাকায় তারা মাঝেমধ্যে ভিজিটর থেকে নামমাত্র ওষুধ পেলেও সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ পান না। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের দূরের চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়, যা সময় ও অর্থ উভয় দিক থেকেই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
স্থানীয় গৃহিণী সুলতানা আক্তার বলেন, “সন্তান জন্মদানের সময় কিংবা জরুরি অসুস্থতায় চিকিৎসক না পেয়ে আমরা ভীষণ ভোগান্তিতে পড়ি। এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার থাকলে সাধারণ মানুষ অনেক উপকৃত হতো।” একইভাবে কৃষক আবদুল মান্নান অভিযোগ করে বলেন, “সরকার যদি এখানে চিকিৎসক ও কর্মচারী নিয়োগ দিত, তবে আমাদের এত কষ্ট করতে হতো না।”
স্থানীয়দের দাবি, এ ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র ভরসা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অথচ অবহেলা ও জনবল সংকটে তা কার্যত নামমাত্র সেবায় সীমাবদ্ধ।
এ বিষয়ে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, জনবল সংকটের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাছাড়া ভিজিটর যাতে নিয়মিত থাকে সে ব্যবস্থা করা হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোই গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রধান ভরসা। তাই দ্রুত চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে এ কেন্দ্রকে সচল করা না হলে হাজার হাজার মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতে থাকবে।