
দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এতদিন ধরে পরিচিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি আর থাকছে না। আজ শুক্রবার সকালে চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ। এখন থেকে এই শোভাযাত্রা ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিত হবে।
নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এল যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু থেকেই নাম পরিবর্তনের জন্য জোর দিচ্ছিলেন। এই বিষয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে সাংবাদিকরা একাধিকবার প্রশ্ন করেছিলেন। তবে উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, নাম নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে শোভাযাত্রার আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অবশেষে আজ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজিত পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপনের বিভিন্ন দিক নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ, শোভাযাত্রার উপকমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এ এ এম কাওসার হাসান, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও উপকমিটিসমূহের অন্যান্য সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে উৎসবমুখর ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে থাকে। এই শোভাযাত্রা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্ববহ বলে বিবেচিত হয়। অন্যান্য বছরের মতো এবারও চারুকলা অনুষদ পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজনের কাজ চলছে।
তিনি আরও জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের শোভাযাত্রাটি হবে আরও বৃহৎ, বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ। শোভাযাত্রায় বৈচিত্র্য এবং বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
উল্লেখ্য, গত শতাব্দীর আশির দশকে শুরু হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কোর গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রতি বছর এই শোভাযাত্রায় বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়বাহী বিভিন্ন প্রতীকী শিল্পকর্ম, মুখোশ ও প্রাণীর প্রতিকৃতি বহন করা হয়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এবার ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় যে, রবিবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চারুকলার বকুলতলায় চৈত্রসংক্রান্তির বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।