মে ৩, ২০২৫

শনিবার ৩ মে, ২০২৫

ভুট্টা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা

Rising Cumilla - Corn cultivation
ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের নদ-নদীর তীরবর্তী জনপদে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। দীর্ঘদিনের অভাব আর কষ্টের জীবন পেরিয়ে, লাভজনক ভুট্টা চাষের হাত ধরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন এখানকার কৃষকরা। অনুর্বর বালুমাটিতে ফলানো সোনালী ফসলে ভরে উঠছে তাদের গোলা, মুখে ফুটছে আত্মনির্ভরতার হাসি।

জেলার সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহিম যেন এই পরিবর্তনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ২৫ বছর আগে নদীভাঙনের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে তিনি যখন হলোখানা ইউনিয়ন থেকে ভোগডাঙ্গায় এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন অভাব ছিল তার নিত্যসঙ্গী। চার সন্তানের ভবিষ্যৎ ছিল অনিশ্চিত। নিরুপায় হয়ে এক ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে। তবে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়, নিঃস্ব হয়ে ছেলে ফিরে আসে ঘরে।

কিন্তু আব্দুর রহিম হার মানেননি। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বিদেশ ফেরত ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন চরের পতিত বালু জমিতে ফসল ফলানো। শুরুতে নানা ফসল চাষ করে ক্ষতির সম্মুখীন হলেও, গত পাঁচ বছর ধরে ভুট্টা চাষ তার জীবনে এনেছে স্বস্তি ও সমৃদ্ধি। এবার ধরলার চরে ২০ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন তিনি। আশা করছেন, খরচ বাদে প্রায় আট লক্ষ টাকা লাভ হবে। আব্দুর রহিম প্রতিবেদককে বলেন, “এক সময় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা ছিল। ছেলেদের গায়ে জামা ছিল না। নদী ভাঙনের পর সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভুট্টা চাষ করে আমার সংসারে শান্তি ফিরে এসেছে, ইনশাআল্লাহ।”

শুধু আব্দুর রহিম নন, জেলার শিক্ষিত বেকার যুবকেরাও এখন ঝুঁকছেন ভুট্টা চাষের দিকে। পাঁচগাছি ইউনিয়নের এমএ পাস করা তিন বন্ধু ধরলার চরে ৬ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। তাদের একজন, নবীন কৃষি উদ্যোক্তা আতাউল করিম জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় তারা প্রতি একরে ৩০-৩৫ মণ ফলন আশা করছেন, যেখানে অন্যরা সাধারণত ১৭-২০ মণ পেয়ে থাকেন। তারা চান, তাদের এই উদ্যোগ দেখে আরও অনেকে উৎসাহিত হোক।

কুড়িগ্রামের ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধ কুমর, ফুল কুমর, গঙ্গাধরসহ ১৬টি নদীর অববাহিকায় প্রতি বছর বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর ১৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। অনুকূল আবহাওয়া এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় সাধারণ কৃষকদের মধ্যেও ভুট্টা চাষের আগ্রহ বাড়ছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন চরাঞ্চলে দেখা যায়, ভুট্টা ক্ষেতে এখন কর্মযজ্ঞ চলছে। নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা ফসল পরিচর্যা ও উত্তোলনে ব্যস্ত। পুরুষ শ্রমিকরা দৈনিক ৫’শ টাকা এবং নারী শ্রমিকরা ৪’শ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। এমনকি ভুট্টার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ থাকায় অনেকেই শুধু মোছা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মতিন মিয়া নামের একজন জানান, ভুট্টা চাষ একদিকে যেমন কৃষকদের লাভবান করছে, তেমনি এর সাথে জড়িত শ্রমিকদেরও রুটিরুজির সংস্থান হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি কুড়িগ্রামের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার ডা. মামুনুর রহমান জানান, এ বছর জেলায় ভুট্টার ফলন খুবই ভালো হয়েছে। ভুট্টা একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। তারা কৃষকদের চরের অনুর্বর জমিতে ভুট্টা চাষে উৎসাহিত করছেন, তবে উর্বর জমিতে ধান চাষকেই প্রাধান্য দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন