একসময় ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম শীর্ষ গন্তব্যস্থল হলেও, বর্তমানে কানাডায় ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদন বাতিলের হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা গেছে, পড়াশোনার জন্য আবেদনকারী প্রায় ৭৫ শতাংশ ভারতীয় শিক্ষার্থীর আবেদনই প্রত্যাখ্যান করেছে কানাডা প্রশাসন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে আগস্ট মাসের তথ্য তুলে ধরে এ খবর জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর কানাডার কঠোর বিধিনিষেধ এবং ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের উচ্চ হারের কারণে ভিসাপ্রত্যাশীদের মধ্যে আবেদনের আগ্রহ অনেক কমে গেছে।
সরকারি তথ্যানুযায়ী, স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদনকারী ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্টে এই সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৯০০, যা থেকে কমে ২০২৫ সালের আগস্টে মাত্র ৪ হাজার ৫১৫-তে দাঁড়িয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স সরকারি তথ্য উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের আগস্টে ভিসা আবেদন বাতিলের হার যেখানে ৩২ শতাংশ ছিল, সেখানে চলতি বছরের আগস্টে প্রায় ৭৪ শতাংশ ভারতীয় শিক্ষার্থী আবেদনকারীর পারমিট প্রত্যাখ্যান করেছে কানাডা সরকার। এই বিপুল বৃদ্ধি ভিসা প্রত্যাশীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এর আগে, অস্থায়ী অভিবাসন রোধ এবং শিক্ষার্থী ভিসা জালিয়াতি মোকাবেলার পদক্ষেপ হিসেবে কানাডা ২০২৫ সালের প্রথম দিকে টানা দ্বিতীয় বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ছাত্র পারমিটের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ১৫৫০টি স্টাডি পারমিটের আবেদনে জাল স্বীকৃতিপত্র বা ‘অ্যাকসেপটেন্স লেটার’ পায় কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, নতুনভাবে আপগ্রেড করা যাচাইকরণ ব্যবস্থা গত বছর প্রাপ্ত আবেদনগুলো থেকে ১৪ হাজারের বেশি জাল স্বীকৃতিপত্র চিহ্নিত করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন মুখপাত্র স্পষ্ট করেছেন যে, দেশটি এখন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য যাচাইকরণ প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর করেছে এবং আবেদনকারীদের জন্য আর্থিক প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি করেছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে কানাডার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের শীর্ষ উৎস ছিল ভারত। অটোয়ার ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, ভারতীয় শিক্ষার্থীদের আবেদনের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাখ্যানের হার সম্পর্কে তারা অবগত আছেন, তবে পারমিট প্রদান সম্পূর্ণরূপে কানাডার কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে।
দূতাবাস আরও জানায়, “আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই যে বিশ্বের সেরা মানের কিছু শিক্ষার্থী ভারত থেকে এসেছে এবং কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলো অতীতে এই শিক্ষার্থীদের প্রতিভা এবং একাডেমিক উৎকর্ষতা থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে।”
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এর আগে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সময় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবও ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে পড়েছে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
