ডিসেম্বর ৫, ২০২৪

বৃহস্পতিবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদ্রাসা শিক্ষককে হয়রানির অভিযোগ

RisingCumilla.Com - Allegation of harassment of Madrasa teacher in Brahmanpara
ছবি: প্রতিনিধি

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা ইসলামিয়া গাউছিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক ও ধলগ্রাম কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ষড়যন্ত্রমূলক, মানহানিকর, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন আবদুর রহমান।

তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন-  আমি আব্দুর রহমান দীর্ঘ ৩২ বছর যাবৎ চান্দলা ইসলামিয়া গাউছিয়া আলিম মাদ্রাসায় সুনাম ও নিষ্ঠার সহিত চাকরিরত আছি। দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ চান্দলা ধলগ্রাম কেন্দ্রিয় জামে মসজিদে সুনাম ও নিষ্ঠার সহিত ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দীর্ঘ ১৭ বছর ইমামতির সুনামে ঈর্ষাদ্বীত হয়ে সম্পূর্ণ হিংসাপরায়ণ আলেম বিদ্বেষী একটি অদৃশ্য কুচক্রি মহলের কু-পরামর্শে চান্দলা ধলগ্রামের বাসিন্দা তারু মিয়ার ছেলে জনৈক আরব খান গত ২৫/০৭/২০২৪ ইং তারিখে সদ্য বিদায়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স ম আজহারুল ইসলাম মহোদয় ও ধলগ্রাম জামে মসজিদ কমিটির সভাপতির বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। এলাকাবাসীর সার্বিক সম্মতিতে ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে মসজিদ কমিটি এই বিষয়টি সমাধানের লক্ষে স্থানীয় ইউপি সদস্য আতাউর রহমান ও স্থানীয় সমাজপতি ফয়েজ আহম্মদ মাষ্টার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট সামাজিক শালিসের মাধ্যমে সমাধানের অনুমতি চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুমতি প্রদান করেন এবং নির্বাহী অফিসারের মনোনীত প্রতিনিধি হিসাবে তদন্তকারী আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা উক্ত সালিশী বৈঠকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন।

পরবর্তীতে স্থানীয় সমাজসেবক চাঁন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শালিস বৈঠকে নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও অভিযোগকারীর মনোনীত বিশিষ্ট কয়েকজন আলেম উপস্থিত ছিলেন।

ওই সালিশী বৈঠকে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য কোন স্বাক্ষ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় তাহার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়। যা প্রমাণস্বরূপ আপোষ মিমাংসার প্রতিবেদন ও উপস্থিত সালিশী সর্দারগণের স্বাক্ষর লিপিতে প্রমাণিত। উক্ত সালিশী বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ ও বিশিষ্ট আলেমগণের উপস্থিতিতে অভিযোগকারীর নির্বাচিত স্বাক্ষীগণের স্বাক্ষ্য গ্রহণের প্রেক্ষিতে তার মনোনীত আলেমগণ তাহার লিখিত অভিযোগটি সত্য প্রমান করতে ব্যর্থ হওয়ায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে রায় ঘোষণা করেন। এতেই প্রমাণিত হয় যে, আমার বিরুদ্ধে আনিত উক্ত অভিযোগটি একটি কুচক্রি মহলের কু-পরামর্শে ও তার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার আক্রোশে আমাকে অসম্মান ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য করেছে।
উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ ও তার মানিত আলেমদের সিদ্বান্ত মোতাবেক অভিযোগকারী সকলের সম্মুখে আমার হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ভবিষ্যতে এমন অমার্জনীয় অপরাধ করবে না মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। তার এহেন কার্যকলাপে সমাজবাসীর মনে ক্ষুভ জমে যাওয়ায় সমাজবাসীর কাছেও উক্ত অভিযোগ দায়ের করা তাহার ভুল হয়েছে মর্মে স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনা করে।

এছাড়া শালিসি বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপস্থিত এলাকবাসী, সালিশী বৈঠকের ব্যক্তিবর্গ ও আলেমগনের সম্মুখে অভিযোগকারী আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চান এবং তার ভিডিও চিত্র আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।

আমি একজন দীনের খাদেম হিসাবে উপস্থিত বিশিষ্ট্য আলেমগণ ও এলাকার গণ্যমান্য সালিশী ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে তাহাকে ক্ষমা করে দেই। সেই একই ব্যক্তি পূর্বের অভিযোগের কপিটি তারিখ পরিবর্তন করে গত ০৭/১০/২০২৪ ইং তারিখে সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট নিয়ে আবারও দাখিল করে।

উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপযুক্ত কারন দর্শানোর জন্য আমাকে নোটিশ দেওয়া হলে আমি গত ২০/০৮/২০২৪ তারিখে সালিশী বর্গের স্বাক্ষর লিপি সংযুক্ত করে তার জবাব দিয়েছি। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ১২/১১/২০২৪ তারিখে শুনানির জন্য নোটিশ দিলে ঐ দিনে আমি ও আমার পক্ষের স্বাক্ষী ফয়েজ মাষ্টারসহ জবানবন্দী দিয়েছি।

অভিযোগকারী আরব খান যেসকল ভূয়া স্বাক্ষীগণকে হাজির করে আমি ও আমার স্বাক্ষীগণ তাদের চিনি না। তাদের মধ্যে একজন ধলগ্রামের বাসিন্দা নয়। অপরজন ধলগ্রামের বাসিন্দা। মেয়েকে মিথ্যা স্বাক্ষীর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তার মেয়ের মানহানির বিচার প্রার্থী হয়ে এ প্রতিবাদ ও সংবাদ সম্মেলণে উপস্থিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি তাহার প্রতিবাদ করায় বিষয়টি পুনরায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্তের নির্দেশ দেন এবং তা প্রক্রিয়াধীন। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ কোনভাবে প্রমাণিত করতে না পেরে অভিযোগকারী সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও ভুল বুঝিয়ে গত ২৮/১১/২০২৪ ইং তারিখে কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমাদের কুমিল্লা, বাংলার আলোড়ন, ময়নামতি পত্রিকাসহ একাধিক পত্রিকায় “ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে আমার বিরুদ্ধে আনীত ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমার ৩২ বছরের কর্মকাল ও আমার কর্মস্থল চান্দলা ইসলামিয়া গাউছিয়া মাদ্রাসার ঐতিহ্যের মানক্ষুন্ন হয়েছে এবং ধলগ্রাম এলাকাবাসী ও সালিশী বর্গকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা ও অসম্মান করা হয়েছে।

একই মিথ্যা এ অভিযোগ বারংবার দাখিল ও পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করায় আমি মানষিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি এবং আমি সার্বক্ষণিক সার্বিক নিরাপত্তা হীনতায় ভূগছি। এই পরিস্থিতিতে আমি যদি কোন দূর্ঘটনার শিকার হই তার সম্পূর্ণ দায়ভার অভিযোগকারীর উপর বর্তাবে এবং প্রয়োজনবশত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সব শেষে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত, ষড়যন্ত্রমূলক, মানহানিকর ও ভিত্তিহীন। আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, চাঁন মিয়া বেগ, চান্দলা ইসলামিয়া গাউছিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু ছালেহ নুর মোহাম্মদ, ফয়েজ আহাম্মদ, খোরশেদ আলম, আব্দুল অহেদ, মোতালেব মুন্সি সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।