বিচারকদের যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার না হয় সেদিক কঠোরভাবে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
আজ শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ইনার কোর্ট ইয়ার্ডে দুইদিনব্যাপী ‘একবিংশ শতাব্দীতে দক্ষিণ এশিয়ার সাংবিধানিক আদালত: বাংলাদেশ ও ভারত থেকে শিক্ষা’ শীর্ষক কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘ক্ষমতার সঙ্গে দায়িত্ব ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। দায়িত্ব পালনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। আবার ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে এবং ক্ষমতার যাতে অপব্যবহার না হয় সেদিকে কঠোরভাবে খেয়াল রাখতে হবে।’
বিচারকদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আশা করেন, বিচার প্রার্থীরা অত্যন্ত কম খরচে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ন্যায় বিচার পাবে এবং বিচারকগণ তাঁদের মেধা ও মননশীলতার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন।
দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বিচার বিভাগকে সামিল হতে হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তার যাত্রা শুরু করেছে এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এটা মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বল্প সময়ে বিচার প্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, জাতির ক্রান্তিকালে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তার ওপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানকে রক্ষা করেছে। শান্তি ও সঙ্কটে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক ও রক্ষক হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তিনি যোগ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ষড়যন্ত্রকারীদের সেই নীল নকশা বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে।’
রাষ্ট্রপ্রধান সুপ্রিম কোর্টের সেই সব অকুতোভয় বিচারপতি ও আইনজীবীদের যারা বন্দুকের নলের কাছে নতি স্বীকার করেননি ও বিবেককে কখনো বিকিয়ে দেননি, তাঁদের ভূমিকাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
বাংলাদেশ এবং ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দু’টি বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাদের নিজ নিজ যাত্রায় অনন্য পথ অতিক্রম করেছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশই এমন দৃষ্টান্ত প্রত্যক্ষ করেছে যেখানে বিচার বিভাগ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায়, পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং সুশাসনের নীতিগুলোকে সমুন্নত রাখতে হস্তক্ষেপ করেছে।
ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা ও সহমর্মিতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
দু’দেশের বিচার বিভাগ, বিচারক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের বিচার বিভাগ, বিচারক ও জনগণ উপকৃত হতে পারে বলে মত দেন তিনি। বাংলাদেশ ও ভারতের সাংবিধানিক আদালতগুলোকে মামলা জট নিরসন, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বিচারিক জবাবদিহিতার মতো বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেয়ার পাশাপাশি বিচার বিভাগের উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, দু’দেশের বিচার বিভাগ বিচারক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের বিচারক, জনগণ উপকৃত হতে পারে।
সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সাংবিধানিক আদালতগুলোকে ন্যায়বিচারের প্রবেশ অধিকার এবং বিচারের জবাবদিহিতার মতো বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেয়ার পাশাপাশি বিচার বিভাগের উন্নয়নের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ভারতের প্রধান বিচারপতি ড.ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড় উপস্থিত হয়ে সম্মেলনকে আন্তর্জাতিক বহুমাত্রিকতা দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিসহ অন্যান্য সকল অতিথিদের স্বাগত জানান।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সকলকে সম্বিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ভারতের প্রধান বিচারপতি ড. ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, এমপি; বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিগণ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিগণ, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও বিজ্ঞ আইনজীবীগণ।