শনিবার ২৬ জুলাই, ২০২৫

“বাবা আমার জন্য টেনশন করো না, আমি সুস্থ হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ”—মৃত্যুর আগে মাহতাবের শেষ কথা

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মারা গেল কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ১৫ বছর বয়সী কিশোর মাহতাব রহমান ভূঁইয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

গত ২১ জুলাই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পরপরই দগ্ধ অবস্থায় এক কিশোরকে দৌড়াতে দেখা যায়, যা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা সেই কিশোরটিই ছিল মাহতাব, যার করুণ পরিণতি নাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা থেকে মাহতাবের মরদেহ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের চুলাশ-উখারী বাজার ঈদগাহ মাঠে নিয়ে আসা হয়। রাত পৌনে ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জানাজার নামাজ পড়ান স্থানীয় মসজিদের ইমাম লোকমান হোসেন।

মাহতাবের বাবা মিনহাজুর রহমান ভূঁইয়া জানান, মৃত্যুর আগে তার সোনা মানিক তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিল, “বাবা আমার জন্য টেনশন করো না, আমি সুস্থ হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।” ছেলের এই কথাগুলো বলতে গিয়ে বারবার ভেঙে পড়ছিলেন বাবা।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় মাহতাব সহ আরও অনেকে গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনীর সদস্যরা আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। মাহতাবকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।

মাহতাব মাইলস্টোন স্কুলের ইংলিশ ভার্সনে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। তার শিক্ষার্থী কোড নম্বর ছিল ১০১৪। প্রতিদিন তার বাবা নিজেই তাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন। দুর্ঘটনার সময়ও তিনি স্কুলের কাছেই ছিলেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মাহতাব ছিল দ্বিতীয়। তার বড় বোন নাবিলা মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট বোন নাইসার বয়স মাত্র ৩ বছর। পরিবারটি ঢাকার উত্তরায় বসবাস করত।

আরও পড়ুন