ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

শনিবার ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাজারে নাগালে নেই কোনো নিত্যপণ্য, শিগগিরই মাঠে নামবে টাস্কফোর্স

RisingCumilla.Com - Cumilla Commodity market
ছবি: রাইজিং কুমিল্লা

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কিছুদিনের জন্য নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নিত্যপণ্যের বাজার আবার অস্থির হয়ে উঠেছে। কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানোর পরও বাজারে দাম কমছে না। বন্যার অজুহাত দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তবে বাজার সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলছেন ক্রেতারা।

ডিম ও পেঁয়াজ আমদানির পরও সুফল মিলছে না বাজরে, বরং বেড়েই চলছে। এক ডজন ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা কেজি। সপ্তাহখানেক আগেও বাজারে ১৮০-২২০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কেনা যেতো। গত সপ্তাহজুড়ে টানা বৃষ্টির মধ্যে বাড়তে থাকে মরিচের দাম। এখন খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হয়েছে।

এক সপ্তাহ আগে এক কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা, এখন তার দাম ৫২ থেকে ৬০ টাকা৷ মিনিকেট চালের দামও কেজিতে ছয় টাকা বেড়েছে।

আলুর কেজি এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা৷ আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে৷ এছাড়া আলু আমদানিতে থাকা তিন শতাংশ এবং পেঁয়াজ আমদানিতে থাকা ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ তারপরও কমছে না এই দুইটি পণ্যের দাম ৷  

ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে গেছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৭০-১৮০ টাকা, এখন ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ব্রয়লারের দাম আরো বেশি। সোনালি মুরগির দামও কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ২৭০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কুমিল্লার রাজগঞ্জ-বাদশা মিয়ার বাজার বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু মরিচ নয় বাজারে অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেশিরভাগ সবজি ৮০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে বরবটি কেনা যেতো ৮০-১২০ টাকা কেজি দরে। বাজারভেদে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকায়। বেগুনের দাম কেজি প্রতি ৬০ টাকা বেড়ে ১২০-১৩০ টাকা হয়েছে। টমেটো, পটোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, করলা, ঢ্যাঁড়স, লাউসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

টিসিবির বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৮ আগস্টের তুলনায় রোববার (৬ অক্টোবর) মোটা চাল কেজিতে ১ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৬ টাকা, পাম তেল ১২ টাকা, চিনি ৩ টাকা ও ডিম ডজনে ১৫ টাকা বেড়েছে।

খুচরা বিক্রেতাদের মতো সাধারণ ভোক্তাদেরও দাবি, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণেই কমছে না নিত্যপণ্যের দাম। এতে বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারকে মনিটরিং পলিসি ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি বৃহৎ শিল্প গ্রুপকেও দায়বদ্ধতার আওতায় আনতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম যথার্থই গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভবিষ্যতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক নানা চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। নিত্যপণ্যের বাজার ও সরবরাহব্যবস্থায় সংস্কার দরকার। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

রাজগঞ্জ বাজারে সবজি কিনতে যান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা। তিনি বাজার থেকে চার ধরনের সবজি কিনলেন। মোট ব্যয় হয় ৩১০ টাকা। অথচ ১৫ দিন আগেও এসব সবজি ১৫০-থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে কেনা যেত বলে জানান তিনি। এভাবে দাম বাড়লে আমাদের অবস্থা বেগতিক হবে। তিনি জানালেন এখনই বাজারের দিকে সরকারের নজর দেওয়া দরকার ।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন আবার আগের অবস্থায় চাঁদাবাজ ও সিন্ডিকেট ফিরে এসেছে৷ শুধুমাত্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতবদল হয়েছে৷’

রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে বলেছেন, বাজারে এখন আগের মতো চাঁদাবাজি নেই। আমদামিও যথেস্ট আছে তারপরও কেন নিত্যপণ্যের বাড়ছে? তদারকি করা দরকার। বাজার অস্থিতিশীর করার জন্য একটি পক্ষ পায়তারা করছে। প্রশাসনের আরও সজাগ থাকা উচিৎ।

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে রোববার (৬ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া লিখেন, ‘অনেকগুলো পণ্য ডিউটি ফ্রি করার পরও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুতই মাঠে নামবে টাস্কফোর্স।’