সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশে কি আসলেই ব্রাহমা জাতের গরু নিষিদ্ধ?

Brahman
ছবি: ফেসবুক

দেশের সাধারণ মানুষের প্রাণ যখন তুলনামূলক কম মূল্যে গরুর মাংসের খোঁজে ভোক্তারা; তখন ‘নিষিদ্ধ’ কথায় সারাদেশে বিতর্কের মুখে পড়েছে মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাত ব্রাহমা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে মূল ধারার গণমাধ্যম; সবখানেই বেশ সরব ব্রাহমা গরুকে অবৈধ আর নিষিদ্ধ বলে প্রমাণে বা নিজের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে।

সম্প্রতি এক ঘটনায় এ আলোচনা যেন আরও বেড়েছে। তাহলে প্রশ্ন জনমনে দেখা দিয়েছে— বাংলাদেশে কি ব্রাহমা জাতের গরু নিষিদ্ধ?

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪ এর ৩৪ ধারায় গবাদিপশুর হিমায়িত সীমেন (এইচএস হেডিং ০৫.১১ এর অধীন শ্রেণিবিন্যাসযোগ্য) আমদানি বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলে হয়েছে, গবাদিপশুর হিমায়িত সিমেন ও এমব্রায়ো, ফ্রিজিয়ান, ফ্রিজিয়ান ক্রস, শাহিওয়াল, শাহিওয়াল ক্রস, ফ্রিজিয়ান-শাহিওয়াল ক্রস, এএফএস, এএফএস ক্রস জাতের গবাদিপশুর হিমায়িত সিমেন (ডিপ ফ্রোজেন সিমেন) ছাড়া অন্যান্য গরুর সিমেন আমদানি নিষিদ্ধ।

তবে শর্ত থাকে যে, ফ্রিজিয়ান, ফ্রিজিয়ান ক্রস, শাহিওয়াল, শাহিওয়াল ক্রস, ফ্রিজিয়ান-শাহিওয়াল ক্রস, এএফএস, এএফএস ক্রস, ব্রাহমা, মুররাহ, নিলিরাভি ও মেডিটেরানিয়া মহিষের জাতের গবাদিপশুর হিমায়িত সিমেন, এমব্রায়ো আমদানি করা যাবে। অর্থাৎ এই নীতি আদেশে ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন আমদানিতে কোনো বাধা নেই।

এই নীতিমালায় কিছু শর্ত থাকলেও ব্রাহমা জাতের গরুকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়নি। ২০০৭ সালের জাতীয় প্রাণিসম্পদ নীতিমালাতেও ব্রাহমাকে নিরুৎসাহিত করার মতো কিছু উল্লেখ নেই।

২০১৩ সালের জুলাইয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক ওই প্রকল্পের মূল্যায়নে বলেন, একটি দেশীয় গরুর প্রাপ্ত বয়সে মাংস উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে মাত্র ৭০-৮০ কেজি, সেখানে ব্রাহমা জাতের একটি প্রাপ্তবয়স্ক (২০-২৪ মাস) গরুর মাংস উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে ৭০০-৮০০ কেজি বা আরও বেশি। তাই, মাঠ পর্যায়ের কৃষক ও খামারিদের মধ্যে ব্রাহমা জাতের গবাদিপশু পালনে আগ্রহ ও উদ্দীপনা দেখা গেছে।

এ প্রকল্প পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হলে ২-৩ বছর বয়সে একটি গরুর ওজন প্রায় ২৭ মণ বা এক টন পর্যন্ত হতে পারে। সঠিক মাত্রায় খাবার দিলে বাংলাদেশে একটি ব্রাহমা জাতের বাছুরের দৈনিক গড়ে ৯০০-১০০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি পায়।

একইসঙ্গে তিনি সুপারিশ করেন, বাণিজ্যিক ব্রাহমা খামার স্থাপন ও পরিচালনার জন্য আগ্রহী খামারিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাসহ ফেসিলিটেটরের ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্রাহমা জাতের গরু লালন-পালনকে এগিয়ে নেওয়ার সুপারিশও করেন তিনি।

তবে কেন এই বিতর্ক? কেনই-বা নিরুৎসাহিত করা হয় লাভজনক এই প্রজাতির গরু উৎপাদনে?

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের কোনো আইন-নীতিমালার কোথাও ব্রাহমা নিষিদ্ধ না হলেও বাণিজ্যিক পরিসরে এই জাতের গরু লালন-পালনের অনুমতি দেই না।

তিনি বলেন, দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে এতদিনের চেষ্টায় দেশি জাতের সঙ্গে ফ্রিজিয়ান, হলস্টিয়ানের ক্রস করে অনেক বেশি দুধ উৎপাদনের জাতের সম্প্রারণ করা হয়েছে। ব্রাহমার দুধ খুবই কম হয়। দুই তিন লিটারের মধ্যেই থাকে। এখন যদি ব্রাহমার সিমেন ব্যবহার বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে অসতর্কতা বশত দুধের জাতের গাভীতে এটি কোনো কারণে চলে গেলে দুধের লাইনটি নষ্ট হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ব্রাহমা গরু ঘিরে এতো আলোচনা সমালোচনার শুরু ২০২১ সালে ঢাকার বিমানবন্দরে। সেসময় রাজধানীর এক অ্যাগ্রোর আমদানি করা ১৮টি গরু জব্দ করা হয়। পরে অবশ্য সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে তা খালাসের অনুমতি দেয়া হয়। হাইকোর্টের দেয়া এক আদেশে দেখা যাচ্ছে, মিথ্যা ঘোষণায় ওই চালান আমদানির কথা বলা হলেও ব্রাহমাকে নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়নি ওই রায়ে।