সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বসন্তের রঙে মেতেছে দেশ: আজ বসন্ত, ভালোবাসার দিন

ছবি: সংগৃহীত

বেশ কিছুদিন ধরেই বাতাসে বইছে মিষ্টি এক আনন্দের আমেজ। দক্ষিণা দুয়ার খুলে দিয়েছে প্রকৃতি। সে দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। আজ পয়লা ফাল্গুন। একইসঙ্গে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বসন্তের রং আর ভালোবাসায় একাকার হওয়ার দিন।

বারো মাসে তেরো পার্বণের বাঙালি জীবনে দুই আনন্দ একই দিনে—১৪ ফেব্রুয়ারি। ফাল্গুনের বাসন্তী আবহ আর ভালোবাসা দিবসের লাল মিলেমিশে যোগ করেছে এবারের বসন্ত বরণ। এক কথায় ভালোবাসায় মাথামাখি এক বসন্ত। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর গত দুই বছর ধরে একই দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।

তীব্র শীতের কঠিন সময় পার করে প্রকৃতি যখন ডানা মেলে সেই আয়োজনকে বিভিন্ন দেশেই বরণ করা হয়। আমরা রঙিন পোশাকে বসন্তবরণ করি। সাধারণত বাসন্তী, হলুদ, লাল পোশাক পরে এদিন উৎসব আয়োজন হয়। পাশের দেশ ভারতে সাদা পোশাকে বসন্ত বরণ হয়।

বুলগেরিয়ায় মার্চের ১ তারিখে বসন্ত ফিরে আসার দিনটি পালন করা হয়। লাল ও সাদা সুতায় তৈরি ছোট দুটি পুতুল বানিয়ে পরে থাকে প্রায় মাসজুড়ে। বসন্তের প্রথম আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলের গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় শুভ কামনা হিসেবে। চেরি ব্লসম ফেস্টিভ্যাল জাপানের বসন্ত উৎসব। এই সামাজিক যোগাযোগের যুগে বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের বসন্তের রাজ্যে বিচরণের ছবি এখন আমাদের সবারই চেনা।

বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। বাংলায় বসন্ত উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হলেও এর শুরুর একটা ঐতিহ্যময় ইতিহাস আছে, যা অনেকের অজানা।

Today is spring
ছবি: সংগৃহীত

মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। তাই পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারলেই বসন্ত উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালি চেতনাকে।

প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় হবে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজিত ‘বসন্ত উৎসব।’ ২৬ বছর আগে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। এ বছরের বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানমালায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। বসন্তের নাচ, গান ও কবিতার পাশাপাশি প্রতিবাদী নাচ, গান ও আবৃত্তিরও আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ।

শিল্পকলা একাডেমির বসন্ত উৎসবের আয়োজনটি শুরু হবে বেলা ৩টায়। ঢাকার রমনা পার্কের শতায়ু অঙ্গনে এ আয়োজনে থাকবে আলোচনা সভা ও বসন্ত নৃত্য। পরে শিল্পীদের শোভাযাত্রা যাবে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। একাডেমির নন্দন মঞ্চে পরে সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।

সমগীতের বসন্ত উৎসব শুরু হবে সকাল ৯টা থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় এ আয়োজনে গাইবেন কফিল আহমেদ, সায়ান। এছাড়া গানের দল লীলার পরিবেশনা থাকবে।

ঢাকার পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশকেন্দ্রে বসন্ত বরণের আয়োজন শুরু হবে বেলা ৩টায়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বসন্ত বরণের আয়োজনটি শুরু হবে দুপুর ১২টায়। শিল্পকলা একাডেমির বাউল শিল্পীরা বাংলার লোককবিদের গান পরিবেশন করবেন। সংগীতায়ন ছায়ানটের বসন্ত উৎসব উদযাপিত হবে ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়।

দুই দিবস ঘিরে ফুলচাষিদের মুখে হাসি: ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি জানান, এবার বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে ফুলের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ভালো দাম পেয়ে ফুলচাষিদের মুখেও যেন বসন্তের হাসি।